ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

কর্মবিরতিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা

সোমবার থেকে মাধ্যমিকে শাটডাউন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০২:১২ এএম

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১১তম গ্রেডসহ ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ‘লাগাতার’ কর্মবিরতির শুরু করেছেন দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। ফলে বার্ষিক পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে বন্ধ হয়ে গেল দেশের প্রায় ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান। এদিকে দশম থেকে নবম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনসহ চার দফা দাবিতে আগামী সোমবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম বর্জন করে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন  সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। সব মিলিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।

রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয় চত্বরে গতকাল সকালে ‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র ব্যানারে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন। সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন মাহমুদ সালমী বলেন, ‘পদোন্নতিযোগ্য একটিমাত্র পদ থাকায় সহকারী শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন পদোন্নতি পাচ্ছেন না। বর্তমান বাস্তবতায় দশম গ্রেডের বেতনে শিক্ষকেরা হিমশিম খাচ্ছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই, সহকারী শিক্ষক পদটি নবম গ্রেডে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করে দ্রুত সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করে গ্রেজেট প্রকাশ। এই অধিদপ্তর গঠন করে শিক্ষকদের পদগুলো ক্যাডারভুক্ত করলে আমরা অন্যান্য প্রশাসনিক পদে পদোন্নতির সুযোগ পাব।’

মাধ্যমিকের শিক্ষকদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন এবং বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া।

অন্যদিকে গতকাল থেকে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে কর্মসূচি শুরু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তারা বলছেন, দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।

পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আমরা দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলাম। গত ৮ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি এবং পরে শাহবাগে কলম সমর্পণ কর্মসূচির পর পুলিশের অতর্কিত হামলায় শতাধিক শিক্ষক আহত হন। পরে ৯ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এবং ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সরকার আপাতত আমাদের ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার আশ্বাস দেয়। যা, পরবর্তীতে তা দশম গ্রেডে উন্নীত করা হবে। ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও এ আশ্বাস উল্লেখ ছিল। কিন্তু, আশ্বাস পাওয়ার পর ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপনসহ তিন দফা দাবির বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। যে কারণে আমরা এ লাগাতার কর্মবিরতি পালন কর্মসূচি শুরু করেছি।’

পরিষদের আরেক আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আজ (গতকাল) থেকে আমাদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না করে শিক্ষকরা কেউ কাজে যোগ দেবেন না। আমরা মনে করি, এ আন্দোলন প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদার লড়াই। আমরা চাই, সরকার গত ১০ নভেম্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হোক। এছাড়া পদোন্নতি ও স্কেল বিষয়ে আমাদের দুটি দাবি রয়েছে। সেগুলোও পূরণ করতেই হবে।’

এদিকে, গতকাল বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছেÑ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আশ্বাসের পর ১৬ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও অদ্যাবধি ৩ দফা দাবির মধ্যে আপাতত ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি ও অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নে কাক্সিক্ষত দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বানে সারা দেশের প্রায় সব বিদ্যালয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপাতত ১১তম গ্রেডসহ ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় আগামী রবিবার ও পরবর্তি নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে। সন্তোষজনক ও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না পাওয়া গেলে সামনের দিনে আরও কঠোরতম কর্মসূচি প্রদান করতে আমরা বাধ্য হবো।

এর আগে গত বুধবার রাতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর পাঁচজন আহ্বায়কের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস সত্ত্বেও দাবিগুলোর বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু করার কথা থাকলেও কর্মসূচি এগিয়ে এনে ২৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।