গর্ভাবস্থার একটি জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা হলো প্রিক্ল্যাম্পসিয়া, যেখানে মায়ের শরীরে আকস্মিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি দেখা দিতে পারে। সাধারণত গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পর এই অবস্থা দেখা যায় এবং দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা না করলে এটি মায়ের পাশাপাশি গর্ভের শিশুর জন্যও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ রোগে করণীয় সম্পর্কে জানাচ্ছেন দিনাজপুরের রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আকতার।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় প্লাসেন্টায় পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের ঘাটতি, মায়ের রক্তনালির সমস্যা, পূর্ব থেকে হৃদরোগ বা কিডনি সমস্যার ইতিহাস, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস কিংবা পূর্ববর্তী গর্ভধারণে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া থাকার অভিজ্ঞতা। এ রোগের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হাত-পা-মুখে অস্বাভাবিক ফোলাভাব, দৃষ্টিতে ঝাঁপসা দেখা বা আলো সহ্য করতে সমস্যা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমিভাব বা বমি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করা ঠিক নয়, কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার জটিলতা হিসেবে হৃদরোগ, কিডনি বিকল হওয়া, লিভার ক্ষতি, এমনকি অ্যাপসাইক্ল্যাম্পসিয়া (খিঁচুনি) পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে শিশুর ক্ষেত্রে অকাল জন্ম, কম ওজন নিয়ে জন্ম বা প্লাসেন্টার জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই ঘরোয়া সতর্কতা হিসেবে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, লবণ ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার কমানো, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যেকোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে দেরি না করে প্রসূতি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। মনে রাখবেন, সচেতনতা এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসাই পারে এই জটিলতা মোকাবিলা করতে। তাই নিজের সুস্থতা ও গর্ভের সন্তানের নিরাপত্তার জন্য সবসময় সতর্ক থাকুন, নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখুন।

