ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

আদালতের পর্যবেক্ষণ

চারবার প্রধানমন্ত্রী থেকেও সরকারি সম্পত্তির লোভ করেছেন শেখ হাসিনা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০১:২৮ এএম

চারবার প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সরকারি ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির প্রতি লোভ করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি সরকারি পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেসহ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনকে সম্পত্তি বরাদ্দ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ও তার দুই সন্তানের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত এমন মন্তব্য করেছেন। প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায় দেখার পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ও অন্যায় করেছে বলে পর্যবেক্ষণে তুলে ধরে আদালত বেআইনি ও একাধিক প্লট ভোগকারীকে শনাক্তের নির্দেশ দিয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় শেখ হাসিনা ও তার দুই সন্তানকে সাজার রায় দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রচলিত আইনি কাঠামো লঙ্ঘন করে শুধু নিজের জন্য রাজউকের ১০ কাঠা সম্পত্তি নেননি বরং তিনি তার পদ ও ক্ষমতার প্রভাব ব্যবহার করে রাজউকের আরও ৫০ কাঠা সম্পত্তি পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের বরাদ্দ দিয়েছেন। নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্রত্যেককে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেন। এই বরাদ্দ ও অনুমোদন প্রক্রিয়া আইনসঙ্গত প্রশাসনিক ব্যবস্থার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ, যার মাধ্যমে তিনি স্বজনদের বেআইনি সুবিধা দিয়েছেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকায় সেই কর্তৃত্ব ব্যবহার করে রাজউকের ৬০ কাঠা সম্পত্তির ১০ কাঠা নিজে এবং বাকিটা তার ছেলে, মেয়ে, বোন ও বোনের সন্তানকে দিয়েছেন। তার এই মানসিকতা প্রমাণ করে যে, তিনি দুর্নীতির এমন স্থায়ী মানসিকতা পোষণ করতেন, যার মূলে ছিল অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার ব্যবহার এবং সরকারি সম্পত্তির প্রতি লোভী দৃষ্টি। চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তিনি ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং সরকারি বরাদ্দের নীতিমালা উপেক্ষা করে সরকারি সম্পত্তি পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। তিনি সরকারি সম্পত্তিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো মনে করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তা নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছেন।

এই ধরনের আচরণ প্রমাণ করে যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি পদের অপব্যবহার করেছেন এবং তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতাকে আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এ ধরনের কাজ জনগণের সঙ্গে আস্থা নষ্ট করে এবং সততা ও জবাবদিহিতামূলক শাসনের নীতিকে ক্ষুণœ করে। তাই ন্যায়বিচার নিশ্চিতে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বিধায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজা প্রদান করা হলো।

আদালত তিনটি মামলায় শেখ হাসিনা ও দুই সন্তানের নামে ১০ কাঠা করে মোট ৩০ কাঠা সম্পত্তির বরাদ্দ বাতিল করেন। রাজউককে বিরোধপূর্ণ প্লটের দখল গ্রহণ করে কোনো যোগ্য আবেদনকারীর বরাবরে বরাদ্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ৩১ জুলাই দুটি আদালতে পৃথক ছয় মামলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের সাত সদস্যসহ ২৩ জনের নামে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ছয় মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও অনেককে আসামি করা হয়। সব মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।