ঢাকা শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫

ঝুলে গেল এনসিপিসহ ৫ দলের নতুন রাজনৈতিক জোট

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সম্ভাব্য নির্বাচনি জোট আপাতত হচ্ছে না। ঝুলে গেল নতুন জোটের কার্যক্রম। শেষ পর্যন্ত তাদের জোট হবে কি না, তা দেখার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এই জোটের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে একটি বিষয়ে এনসিপি তীব্র ‘আপত্তি’ জানায়। এছাড়া জোট নিয়ে গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। মূলত এই দুই কারণে জোট গঠনের আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি।

গত বুধবার বিকেল থেকে প্রায় চার ঘণ্টা এই নির্বাচনি জোটের লাভ-ক্ষতি নিয়ে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলে আলোচনা হয়। সভায় বেশির ভাগ নেতা জোটের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। কিন্তু ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশকে (ইউনাইটেড পিপল বাংলাদেশ) এই জোটে রাখার প্রশ্নে এনসিপির বেশির ভাগ নেতা নেতিবাচক মত দেন। পরে ওইদিন রাত ১০টা থেকে ঢাকার বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের একটি জায়গায় গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের বৈঠক শুরু হয়। সেখানে এনসিপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম এবং মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আর গণঅধিকারের পক্ষে ছিলেন দলের সভাপতি নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ ও শহিদুল ইসলাম।

বৈঠক সূত্র জানা যায়, আলোচনায় গণ অধিকার পরিষদের নেতারা এনসিপির নেতাদের কাছে জানতে চান, জোটের কোনো রূপরেখা তৈরি হয়েছে কি না। এনসিপি নেতারা বলেন, সেটি এখনো তৈরি হয়নি। গণঅধিকারের নেতাদের কেউ কেউ তাড়াহুড়া করে জোটের আত্মপ্রকাশের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার কথা বলেন। তারা এ-ও বলেন, জোটের বিষয় নিয়ে আরও আগে থেকে আলোচনা হতে পারত। এমনকি গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে এনসিপির সঙ্গে দল একীভূত করার প্রসঙ্গটিও বৈঠকে তোলা হয়।

গণঅধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান আলোচনায় এসব বিষয়ে বেশি শক্ত অবস্থানে ছিলেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে রাশেদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, জোট গঠনের বিষয়ে বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জোট হলে তা হবে তপশিলের আগেই : গত বুধবার রাত ১টার দিকে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম। রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাদের আলোচনা চলে। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে মীমাংসা না হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। পরে গতকাল সকালে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন সাংবাদিকদের এক বার্তায় জানান, এনসিপির সঙ্গে কিছু দলের সমন্বয়ে কোনো জোট ঘোষণা হচ্ছে না। আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা জানান, মূলত দুটি কারণে জোট গঠনের প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে। এগুলো হলোÑ আপ বাংলাদেশের বিষয়ে এনসিপির নেতিবাচক মনোভাব আর গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে জোটে আসা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি। এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জেএসডিÑ এই পাঁচটি দলের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের আলোচনা চলছে, যা নির্বাচনি জোটে রূপান্তরিত হবে। জোট যদি হয়, তাহলে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই হবে।

উল্লেখ্য, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র সংস্কার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে নতুন জোট গঠন হচ্ছে, এ আলোচনা তীব্র হয়। এনসিপির নেতৃত্বে পাঁচটি রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফরম এবং আগ্রহী অন্যান্য দল মিলে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এ জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবে বলে জানানো হয়। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দলগুলোর সমন্বয়ে জোট হচ্ছে, সেটি চূড়ান্ত ঘোষণা গতকাল দেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে সেটি ঝুলে যায়।