ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

কামালের শ্যালক লতিফের লুটপাটের সাম্রাজ্য বহাল

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন
প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ১১:২৩ এএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

দুলাভাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ছিলেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার গণহত্যার অন্যতম সহযোগী। দেড় দশকে কামালের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তার শ্যালক লতিফ ভূঁইয়া কামাল ওরফে হামিদ লতিফ ভূঁইয়া কামাল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ধানমন্ডি এবং কুমিল্লার বরুড়া মনোহরপুরে গড়েছেন বিশাল সাম্রাজ্য।

পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদায়ন বাণিজ্য সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা লতিফ পারভেজ বেপারী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। দুলাভাইয়ের ক্ষমতায় হাজার কোটি টাকার মালিক আসামি লতিফের জিম্মায় রয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপরাধ ও অবৈধ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ। তবুও পুলিশ তাকে রিমান্ডে নেয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জেলগেটে। এতে পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুসারীরা এখনো বহাল তবিয়তে। পুলিশের অনেক সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক লতিফের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দুলাভাই কামালও ভারতে পালিয়ে যান। এরপরই দেশে আত্মগোপনে চলে যান শ্যালক লতিফ।

আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ই নিজের ও দুলাভাইয়ের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। পাশাপাশি ভারতে পালিয়ে থাকা দুলাভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখতেন। শালা-দুলাভাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুবিধা পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা এখন লতিফকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। লতিফের রিমান্ড ঠেকাতে আগে থেকেই একটি বিশেষ মহল তৎপর ছিলো। কারাগারেও তাকে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে একাধিক মামলায় কারাগারে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুত্র সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি।

ডিএমপির গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে জানান, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক লতিফ ভূঁইয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে ইতিমধ্যে পারভেজ বেপারী হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তদন্তের প্রয়োজনে আবারও তাকে রিমান্ডের আবেদন করা হবে আদালতে। অপরাধী যেই হোক, পুলিশ নিজস্ব আইনে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এখানে কোনো প্রভাব বা চাপকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না।

এর আগে, গত ৩ জুলাই গভীর রাতে লতিফকে ঢাকার আফতাবনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জুলাই আন্দোলনে ঢাকার বাড্ডায় পারভেজ বেপারী হত্যা মামলায় গত ৪ জুলাই ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আলমের আদালত লতিফকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

আদালতের গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন জানান, আসামি লতিফের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সামিউল ইসলাম। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নাকচ করে আসামিকে তিন দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। 

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার সাবেক এই চেয়ারম্যান মামলার ১৩৩ নম্বর আসামি। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে অবস্থান করছিলেন ৫০০-৭০০ বিক্ষোভকারী। বিকেলে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়।

এ সময় গুলিতে ফার্নিচার দোকানোর কর্মচারী পারভেজ গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৬ মে তার বাবা সবুজ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল ও লতিফ ভূঁইয়া কামাল সম্পর্কে আপন শালা-দুলাভাই। তবে লুটপাট আর অবৈধ আয়ে ছিলেন ভাই-ভাই। হাতে হাত ধরে এগিয়েছেন ঢাকা থেকে কুমিল্লায়। সাম্রাজ্য গড়েছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ধানমন্ডি এবং বরুড়া ও মনোহরপুরে। দুলাভাইয়ের বদৌলতে লতিফ হয়েছিলেন বরুড়া উপজেলার চেয়ারম্যান। 

জানা গেছে, তদন্তে নামা দুদকের কর্মকর্তারাও শালা-দুলাভাইয়ের অবৈধ সম্পদের তালিকা তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঢাকা এবং কুমিল্লায় অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও লতিফ পরিবারের অবৈধ আয়ের মূল উৎসই ছিল পুলিশে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি, ফায়ার সার্ভিস ও জেল পুলিশে নিয়োগ, অস্ত্র ও মদের বারের লাইসেন্স, নতুন গাড়ি আমদানি, দখল বাণিজ্য, নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ। এসবে ছিল তাদের বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটেই তাদের প্রতি মাসে আয় ছিল প্রায় শতকোটি টাকা।

শালা-দুলাভাইয়ের এমন সব অবৈধ আয় এবং অপকর্ম অজানা ছিল না কারোরই। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৫ বছরে শূন্য থেকে অবৈধ পথে হাজার কোটি টাকা আর সম্পদের মালিক হয়েছেন আলোচিত এই দুজন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখার অপরাধে পালিয়ে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে তার দুর্নীতির সবধরনের তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তার পরিবারের ৩২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া কয়েকশ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা কয়েকজন সন্ত্রাসীর বাণিজ্যে অর্থলগ্নির অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামান খান কামালের পুত্র সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি এবং শ্যালক লতিফ ভূঁইয়া কামালের বিরুদ্ধে। দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসছে।

দুদকে দায়ের করা অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে ‘সিন্ডিকেট’ করে ‘বস্তায় বস্তায়’ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসাদুজ্জামান ও তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান এবং তাদের ছেলে-মেয়ের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তেজগাঁও এবং ধানমন্ডি এলাকায় রয়েছে বিশাল সাম্রাজ্য। বিশাল বলয় তৈরি করে পর পর তিনবার ভোটারবিহীন নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ থেকে থেকে টানা ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সময়ে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা এবং সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। 

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে আসাদুজ্জামান খান কামাল ছিলেন আত্মগোপনে। যৌথবাহিনী হণ্যে হয়ে খুঁজছে তাকে। লতিফ ভূঁইয়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খানের বড় ভাই। এটাই ছিল লতিফ ভূঁইয়া কামালের সবচেয়ে বড় পরিচয়। এই পরিচয়েই তিনি ভাগ্য বদল করে দশ বছরে শূন্য থেকে কোটিপতিদের সারিতে পৌঁছে যান।

একসময় কুমিল্লা শহরের পৈতৃক বাড়িতে লেদ মেশিন বসিয়ে রিকশার স্ক্রু বানাতেন। ভ্যানগাড়িতে করে তা সরবরাহ করতেন। দুলাভাইয়ের হাত ধরে আস্তে আস্তে বদলে ফেলেন নিজেকে। কুমিল্লার বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করতেন শত শত চাকরিপ্রার্থীরা। পুলিশের উর্ধ্বতনরাও আসতেন তদবিরে।

অঢেল অর্থসম্পদের মালিক হওয়ার পর লতিফ ভূঁইয়া কামালের সাধ জেগেছিল ‘বরুড়া’ উপজেলার চেয়ারম্যান হওয়ার। দুলাভাইয়ের কাছে আবদার জানালেন। দুলাভাই শ্যালকের এ আবদার ফেলতে পারেননি। স্থানীয়দের কাছে অচেনা-অজনপ্রিয় লতিফ ভূঁইয়া কামালকে দাঁড় করিয়ে দিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। র‌্যাব-পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের পাহাড়ায় দেওয়া ভোটে বিজয়ী হন। তবে সরকারের পতনের পর পলাতক থাকায় তাকে বরখাস্ত করা হয়

স্ত্রী তাহমিনা খানের দখলে অবৈধ সম্পদ

পালিয়ে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অবৈধ অর্থে গড়া সাম্রাজ্য ছিল ঢাকা এবং কুমিল্লায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, তার এই সাম্রাজ্য দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান। ভাই লতিফ ভূঁইয়া কামালকে সঙ্গে নিয়ে এ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন তিনি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় তিনি শুধু ‘মানি ইনকাম’-এর দায়িত্ব পালন করতেন। পুত্র সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি এসব অর্থ সংগ্রহ এবং তা মায়ের (লুৎফুল তাহমিনা খান) কাছে পৌঁছে দিতেন। মূলত এই পরিবারের সব অবৈধ অর্থ জমা এবং হিসাব-নিকাশ ছিল লুৎফুল তাহমিনা খানের কাছে।

এই কারণেই আসাদুজ্জামান খান কামালের স্ত্রীর (বড় বোন) মৃত্যুর পর দুলাভাইকে বিয়ে করেন তার অবৈধ সাম্রাজ্য নিজেদের দখলে রাখতে। সফলও হয়েছেন তিনি। ভাই লতিফ ভূঁইয়া কামালকে সঙ্গে নিয়ে সামলে রেখেছেন সব সম্পদ। তবে আসাদুজ্জামান ও তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান এবং তাদের ছেলে-মেয়ের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

আসাদুজ্জামান খান কামালের সাম্রাজ্য

পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৩২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া আরও ২০০ কোটি টাকার বেশি মানিলন্ডারিং-সংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম। সব মিলিয়ে আপাতত ৩০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদ্দাসির খান, মেয়ে সোফিয়া তাসনিম খান এবং সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

অর্থ আয়ে সহায়তা করতেন যারা: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবৈধ আয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেনের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বলা হয়, টাকা আদায়ে মূল ভূমিকা ছিল হারুন অর রশীদের। ‘হাজার হাজার কোটি টাকা’ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। হারুন অবসরে গেলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ, দুর্নীতিতে ছিলেন তিনি। ঘুষ-দুর্নীতি থেকে পাওয়া টাকা আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে পাঠানো হতো দেশের বাইরে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এসপি বদলিতে ১ বছরের জন্য ১ কোটি টাকা, স্থান ভেদে ২ থেকে ৩ কোটি টাকাও দিতে হতো। এর মধ্যস্ততা করতেন এপিএস মনির হোসেন ও শরীফ মাহামুদ অপু। ঘুষের এই টাকা রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় তার ছেলের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হতো। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত দশ বছরে পুলিশের এসপি, ওসি ও এসআই বদলি, পদায়ন ও নিয়োগে কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। এর পাশাপাশি তিনি পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দিয়ে ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন শতকোটি টাকা।

লতিফ ভূঁইয়া কামালের সাম্রাজ্য কুমিল্লায়

লতিফ ভূঁইয়া কামালের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরপুরে। চার বোন দুই ভাই তারা। পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আপন শ্যালক তিনি। এটাই ছিল লতিফ ভূঁইয়া কামালের সবচেয়ে বড় পরিচয়। এই পরিচয়েই তিনি ভাগ্য বদল করে দশ বছরে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন।  শতকোটি টাকা ব্যয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচনে ‘বরুড়া’ উপজেলার চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। তবে এখন পলাতক থাকায় বরখাস্ত হয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, লতিফ ভূঁইয়া কামালের কুমিল্লায় রয়েছে অঢেল সম্পদ। মনোহরপুরে ডুপ্লেক্স বাড়ি, কুমিল্লার কাপ্তান বাজারে বাড়ি, কয়েক বিঘা জমি, প্লটের পাশাপাশি রয়েছে ট্রাক ও লড়ির মালিকানা। কক্সবাজারে রয়েছে রিসোর্ট, চট্টগ্রামে দুটি জাহাজ, বসুন্ধরা ও মগবাজার ওয়ারলেসে ফ্ল্যাট। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবসায় তার অর্থলগ্নি অর্থাৎ ডিলারশিপ নিয়েছেন বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাস ও ফুড অ্যান্ড বেভারেজে। খুলনার মোংলা থেকে এলপিজি গ্যাস আনার ট্রাক আছে বেশ কয়েকটি।