শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আফজাল হোসেন রুমেল, বড়লেখা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ১১:৫৭ এএম

স্বপ্নময় জনপদ বোবারথল

আফজাল হোসেন রুমেল, বড়লেখা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ১১:৫৭ এএম

স্বপ্নময় জনপদ বোবারথল

সবুজে ঢাকা পাহাড়ের ঢেউ যেখানে আলতো ছুঁয়ে যায় নীলিমা ছোঁয়া আকাশ, সেখানেই জন্ম নেয় এক নিঃশব্দ অথচ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সৌন্দর্যের গল্প। ঝরনার কলধ্বনি মিশে যায় পাখির কলতানে। প্রতিটি সকাল বয়ে আনে নতুন আলো, নতুন সৌন্দর্যের হাতছানি। এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর স্বপ্নময় জনপদের নাম বোবারথল। এর অবস্থান সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায়। প্রাকৃতিক রূপে ভরপুর এই জনপদ যেন এক জীবন্ত চিত্রকল্প, যেখানে প্রকৃতি আপন খেয়ালে গড়ে তুলেছে সৌন্দর্যের এক নিঃশব্দ রাজ্য।


বোবারথলে রয়েছে উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি, ঘন অরণ্য, কুয়াশা ঢাকা চা-বাগান এবং মনোমুগ্ধকর হ্রদ। এই বোবারথলে দাঁড়িয়ে আছে গগণ টিলা ও অর্থথকি টিলা, যা রাঙামাটির সৌন্দর্যের আদলে। পাহাড়ি ছড়া আর ঝরনার জলের ছলছল শব্দ মুগ্ধ করে পর্যটক হৃদয়। তবুও দেশের পর্যটন মানচিত্রে এটি এখনো অনেকটাই উপেক্ষিত। উন্নত অবকাঠামো, সড়ক যোগাযোগ ও প্রচার পেলে বোবারথল হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ইকো-ট্যুরিজম স্পট।


বোবারথলের সৌন্দর্য যতই অনন্য হোক, এখানকার অবকাঠামোগত দুর্বলতা পর্যটন বিকাশের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বোবারথলে পৌঁছানো এখনো বেশ কষ্টসাধ্য। শুকনো মৌসুমে কোনোভাবে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষাকালে পথঘাট এতটাই কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে যে, জীব গাড়ির চলাচলও প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মেয়াদের সরকারের জনপ্রতিনিধিরা বারবার সড়ক উন্নয়নের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় জনগণ নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাঁচা সড়ক নির্মাণ করলেও তা কার্যত যাতায়াতের জন্য খুব একটা সহায়ক হয়ে ওঠেনি। প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামের জনগণ প্রতিনিয়ত এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। এরমধ্যে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা যেতে অনেক কষ্ট হয় বিশেষ করে যেকোনো রোগীকে নিয়ে যেতে হলে ঝুড়িতে বহন করে নিয়ে যেতে হয়।


এই অঞ্চলের মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে পাহাড়ের পাদদেশে যেতে বাধ্য হন। বসতবাড়ি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত সেই স্থানে পৌঁছাতে তাদের পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। সেখানে থাকা কোয়া (প্রাকৃতিক ঝরণা বা পানির উৎস) থেকে তারা পানি সংগ্রহ করেন। আর এ জন্য তাদের প্রতিদিনই নানা দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।


সাতকরা, কমলা, পান, সুপারি, লেবু, লটকন, আনারস, কলা ও কাঁঠালসহ নানা ধরনের ফলমূল স্থানীয় বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে তারা জীবিকার চাকা সচল রাখছেন। এরমধ্যে সাতকরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি এখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকেই পান ও জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। 


নানা সীমাবদ্ধতা ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগতারা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করার কারণে এখনো সেভাবে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটেনি। পর্যটনের বিকাশ ঘটলে সরকার ও উদ্যোক্তারা এ ক্ষেত্র থেকে অনেক অর্থ আয় করতে পারত। 


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বড়লেখায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু বিগত সরকারের আমলে এই সংসদীয় আসনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের থাকার পরও তিনি এ শিল্পের বিকাশে কোনো কাজ করেননি। বিশেষ করে বোবারথল এখনো অবহেলিতভাবে থেকে গেছে।
বোবারথল কেবল একটি নির্জন পাহাড়ি জনপদ নয়, এটি একটি জীবন্ত অভিজ্ঞতা। এটি এমন এক স্থান, যেখানে প্রকৃতি তার নিঃশব্দ কাব্য দিয়ে মন ছুঁয়ে যায়। এখানকার পাহাড়, বন, চা-বাগান, হ্রদ এবং ঝরনা শুধু চোখে দেখার জন্য নয়Ñ মনে ধারণ করার জন্য।


পরিবেশকর্মী জুনেদ রায়হান রিপন বলেন, আমি বহুদিন ধরেই বড়লেখাকে পর্যটন শহর হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছি। এ জন্য সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দপ্তরে বহুবার গিয়েছি, অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সফল হতে পারিনি। বড়লেখা মৌলভীবাজার জেলার একটি পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হলেও এর অপার পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এই এলাকা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পর্যটনের জন্য যেসব উপাদান দরকার, তার সবকিছুই এখানে রয়েছে। হাকালুকি হাওর, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, চা-বাগান, গগণটিলা (শৈলচূড়া), বেকি লেক, পরিকুন্ড, পাখি বাড়ি ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলো বড়লেখার পর্যটন বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।


তিনি আরও বলেন, ভারত সীমান্তসংলগ্ন এই এলাকায় গান্ধাই, বোবা ও পেকু ছড়ার স্বচ্ছ জলধারা পর্যটকদের জন্য হতে পারে প্রশান্তিপূর্ণ এক প্রাকৃতিক উপহার। এখানে সারি সারি সুপারি গাছ, পানের লতায় মোড়ানো গাছ, ঝুলে থাকা লেবু ও আদালেবুÑ সব মিলিয়ে প্রকৃতির অপূর্ব মাধুর্য রয়েছে। বোবারতলের উঁচুনিচু পাহাড়ি রাস্তা আর গহীন অরণ্যে ঝিঁঝিঁ পোকার সুর যেন রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দিতে পারে। ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকা হওয়ায় বোবারতল থেকে পাশের দেশ ভারতের গ্রাম ও জনপদের দৃশ্যও দেখা যায়, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হতে পারে। আমরা চাই, বোবারথলসহ বড়লেখার পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক দিকগুলোতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।


উপজেলা প্রকৌশলী প্রীতম সিকদার জয় জানান, বোবারথল এলাকার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির উন্নয়নের জন্য প্রায় ছয় বছর আগে একটি টেন্ডার পাস হয়েছিল। তবে কোনো এক কারণে সেই সময় কাজটি শুরু না হওয়ায় তা পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়। এখানে বড় পরিসরের উন্নয়ন প্রয়োজন। সে অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পের প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।’


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘বোবারথল একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। এটি জুড়ী উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি এটি বড়লেখা উপজেলার আওতায় থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই একে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!