ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচায় কৃষিখামার সমবায় সমিতির ভূমিহীন প্রায় ২৭০৫ ভূমিহীন কৃষকের ভোগদখলীয় আবাদি জমির আমন ফসল গুঁড়িয়ে দিয়ে জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপি নেতা রেজাউল করিম খন্দকারের দলবলের বিরুদ্ধে।
গত শনিবার ও রোববার দুই দিন ভূমিহীনদের আবাদি জমির ফসল ট্রাক্টর দিয়ে গুঁড়িয়ে ওই জমি জবরদখল করে নেন। এ সময় বাধা দিলে ওই চক্র ভূমিহীন নারী কৃষকদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন কৃষিখামার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমানসহ ভূমিহীন কৃষক পরিবারের সদস্যরা।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, দক্ষিণ-পূর্ব চর আইচা যৌথ কৃষিখামার সমবায় সমিতির ২৭০৫ জন সদস্য রয়েছে। ১৯৮১-৮২ সালে ওই সমিতির সদস্যদের নামে দক্ষিণ চর আইচা স্বামী-স্ত্রীর নামে ৫টি সিটে ৩৮২২.২৬ একর জমি সরকার ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দেন। বন্দোবস্তের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন ভূমিহীনদের নামে কবিলিয়তের ১০ টাকা ১০ পয়সা ফি নিয়ে খতিয়ান সম্পাদন করে ডিসিআর প্রদান করে ভূমিহীনদের তাদের বন্দোবস্তীয় জমি পরিমাপ করে বুঝিয়ে দেন। ওই জমি ভূমিহীনরা বুঝে নিয়ে বসতবাড়ি উত্তোলন করে চাষাবাদ শুরু করেন।
ভূমিহীনরা দীর্ঘদিন ভোগদখলে থাকার পর ২০০৪-০৫ সালে বিএনপি নেতা রেজাউল করিম খন্দকার তার নিজ নামে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ওই মৌজায় ৭০টি বন্দোবস্তীয় জমি সৃজন করে নেন। এ ছাড়াও শুধু সমিতির সদস্যদের জমি নয়, তিনি মৌজায় গাড়ি শ্রমিক সমিতির সদস্যদের জমিও একই পদ্ধতিতে করে তার স্বজন আর কর্মীদের নামে স্বনামে-বেনামে দোকর বন্দোবস্ত নিয়ে জবর দখল করেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, রেজাউল করিম খন্দকার জালজালিয়াতি করে নিজ নামেসহ স্বনামে-বেনামে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ভুয়া খতিয়ান খুলে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে ভূমিহীনদের জমি জবর দখলের পাঁয়তারা শুরু করলে কৃষিখামার সমিতির সদস্য ও ভূমিহীনরা টের পেয়ে ২০১৫ সালে চরফ্যাশন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে তাদের নামে জমি হাতিয়ে নেওয়া ও ভুয়া দোকর বন্দোবস্ত বাতিল চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত ওই মামলার আদেশে সব সদস্যের নামে কবিলিয়ত, জরিপের পর্চা, নামজারি ও খাজনা পরিশোধের সব কার্যক্রম সম্পাদন করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেন।
জমি কৃষকদের দখলে থাকা অবস্থায় ওই চক্র শুক্রবার সকালে দক্ষিণ-পূর্ব চর আইচা যৌথ কৃষিখামার সমবায় সমিতি ও গাড়ি শ্রমিক সমিতির সদস্যদের চাষাবাদকৃত জমিতে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে প্রায় ৩০ একর জমির ফসল নষ্ট করে দেয়। সেই জমিতে আমন ধান রয়েছে। এরপর একইভাবে ২ আগস্ট প্রায় ১০ একর জমির ফসল নষ্ট করে দেয়। এ সময় বিষয়টি তাৎক্ষণিক দক্ষিণ আইচা থানার ওসিকে বিষয়টি মুঠোফোনে অবগত করা হয়।
রেজাউল করিম খন্দকার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সমিতির নামে ভূমিহীনদের জমি প্রতিপক্ষ জবর দখল করার চেষ্টা করেন। কৃষকরা বাধা দিয়েছেন বলে শুনেছি, তবে আমি এসবের সাথে জড়িত নই।
দক্ষিণ আইচা থানার ওসি এরশাদুল হক ভূইয়া জানান, ওই জমি নিয়ে ভূমিহীনদের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলমান। বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু আদালতে মামলা থাকার কারণে সমঝোতা করা যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :