ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

দ্য টেলিগ্রাফের সম্পাদকীয় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের  ‘ঘনিষ্ঠতাকে’ উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে ভারত

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৭:৫৩ এএম
ভারত

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন গত বছরের ৫ আগস্ট। এরপর থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। উভয় দেশের রাজনীতিতে সাধারণ ভারতবিরোধী মনোভাব কাজ করছে। যা ঢাকা ও ইসলামাবাদের পূর্ব বৈরিতার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী দ্য টেলিগ্রাফের সম্পাদকীয়তে।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত ‘ওয়াচ ক্লোজলি: এডিটরিয়াল অন দ্য শিফট ইন বাইল্যাটারেল রিলেশন্স বিটুইন পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে বাণিজ্য, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যা ভারতের জন্য উদ্বেগের।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ভারতের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো ইসহাক দারের বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক। তিনি জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং সেই ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যারা শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। 

বাংলাদেশে ২০২৬ সালের শুরুর দিকেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, আর এর আগে পাকিস্তান প্রকাশ্যেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। যা নিঃসন্দেহে নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশের ভেতরে যারা ইসলামাবাদ ও ঢাকার দীর্ঘ ও জটিল সম্পর্ক সম্পর্কে সচেতন, তাদের জন্যও চিন্তার বিষয়।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমালোচকদের অভিযোগের বড় অংশই ছিল তার ভারতের প্রতি অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা। এই কারণেই তার ক্ষমতার ১৫ বছরে অভিযোগকৃত স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনরোষ ধীরে ধীরে এক বিস্তৃত ভারতবিরোধী মনোভাব হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সমালোচকদের ভাবতে হবে, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশ্যে সখ্য দেখানোর ফল কী হতে পারে। 

জামায়াতে ইসলামী তো এখন পর্যন্ত ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও গণধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেনি। যদিও আজকের অধিকাংশ বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মগ্রহণ করেছে। তবুও দেশকে সতর্ক থাকতে হবে সেই ভয়ঙ্কর শাসনকালকে আড়াল বা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা থেকে।

বাংলাদেশের উদীয়মান প্রভাবশালী শক্তিগুলোর সঙ্গে দিল্লিকেও সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। ভারত অবশ্যই কিছু রাজনৈতিক শক্তির প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে। তাদের অতীত ইতিহাসের কারণে। কিন্তু বাস্তববাদী রাজনীতি ও ভূরাজনীতিÑ যার প্রবল সমর্থক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করÑ এটা দাবি করে যে, ভারতকে ঢাকার সঙ্গে কাজ করার পথ বের করতেই হবে এবং দ্রুত। সেখানে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য এমন এক নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করছে, যা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।