রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদামে আগুন 

বাঁচানো গেল না ফায়ার ইন্সপেক্টর নাঈমকেও, অশ্রুসিক্ত বিদায়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

বাঁচানো গেল না ফায়ার ইন্সপেক্টর নাঈমকেও, অশ্রুসিক্ত বিদায়

  • অন্যের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় গত ১০ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন 

গাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকা-ে দগ্ধ ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম (৩৫) মারা গেছেন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান তিনি। অগ্নিকা-সহ যেকোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে সবার আগে সাড়া দেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। নিজের জীবন বাজি রেখে রক্ষা করেন অন্যের প্রাণ ও সম্পদ। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে প্রায়ই ঝড়ে যায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রাণ। এবার এই তালিকায় যুক্ত হলেন ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম। এভাবে আগুন নেভাতে গিয়ে গত ১০ বছরে (২০১৫-২৫ সালের সেপ্টেম্বর) ফায়ার সার্ভিসের ২৬ কর্মী নিহত হয়েছেন। 

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৬ সালে ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৪৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন সিনিয়র স্টেশন অফিসার, একজন স্টেশন অফিসার, সাতজন লিডার, ৩৫ জন ফায়ার ফাইটার, তিনজন ড্রাইভার, একজন ডুবুরি, একজন নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ২০২২ সালে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে। ওই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মী নিহত হন। আর গত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসের ৩৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, নাইমের শরীরের ৪২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। গত ২২ সেপ্টেম্বরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চারজন দগ্ধ হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে এরইমধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সর্বশেষ দেশের তরে আত্মত্যাগ করলেন জান্নাতুল নাঈমও। এ ছাড়াও এ ঘটনায় মারা গেছেন দোকান কর্মচারী আল আমিন হোসেন বাবু। 

খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের স্বজনরা জানান, নাঈম ২৪ আগস্ট ১৯৮৮ সালে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের খন্দকার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খন্দকার মোজাম্মেল হক। মোল্লারটেক উদয়ন বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি ও ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন নাঈম। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে স্টেশন অফিসার হিসেবে মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর হিসেবে চট্টগ্রাম ও সর্বশেষ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। এক সন্তানের জনক ছিলেন নাঈম।

এদিকে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে জানাজা শেষে নাঈমকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানান সহকর্মীরা। আর জানাজায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

জানাজার আগে শহিদ জান্নাতুল নাঈমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় অগ্নিসেনাদের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরবর্তী সময়ে প্রয়াত মো. খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করা হয়। শহিদের শ্বশুর আবেগঘন কণ্ঠে বক্তব্যে সবার কাছে সন্তানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দোয়ার আবেদন জানান। বক্তব্য শেষে জানাজা আদায় ও দোয়া পরিচালনা করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ধর্মীয় শিক্ষক মুহাদ্দিস কাজী শরিফ উল্লাহ।

জানাজা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, খন্দকার জান্নাতুল নাঈম দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করার সবই আমরা করব। ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, দগ্ধ হওয়ার পর আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাদের সুস্থ করার। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনা হয়েছে। কারণ বিদেশে পাঠানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না। এরপরও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে ফায়ার সার্ভিসকে গর্বিত করে গেছেন। একই সাথে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, দেশের প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও পিছপা হবে না। 

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, অগ্নিকা-ের লেলিহান শিখায় নিজের জীবন আত্মত্যাগী শহিদ খন্দকার জান্নাতুল নাঈমকে শেষবারের মতো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দেখেন ও শ্রদ্ধা জানান সহকর্মীরা। পরে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করে তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার গড়দুয়ারা গ্রামের পথে। সেখানেই নিজ মাটির বুকে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন অগ্নিসেনাদের এই বীর সন্তান। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!