শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. বাহারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম

ছাতিম ফুলের সুবাসে স্নিগ্ধ গ্রামীণ প্রকৃতি

মো. বাহারুল ইসলাম, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম

ছাতিম ফুলের সুবাসে  স্নিগ্ধ গ্রামীণ প্রকৃতি

শীতের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে বাংলার গ্রামীণ প্রকৃতিতে। এমন সময়ে ঝিনাইদহের একটি আঞ্চলিক সড়কে রাতে ভ্রমণ করলেই মিষ্টি সুবাস যে কাউকে মোহিত করে তুলবে। এই তীব্র সুবাসে বারবার বুক ভরে শ্বাস নিতে মন চাইবে। মুহূর্তেই শরীর-মন চাঙা করে তুলবে। অনুভূত হবে অপূর্ব প্রাকৃতিক সুখ।

ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের ধার ঘেঁষে নানা জাতের গাছের সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য ছাতিমগাছ। সাদা ফুলে ভরে আছে গাছগুলো। সন্ধ্যা হলেই শিশিরের সঙ্গে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। গোটা এলাকা মোহিত হয়ে থাকে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত। ঝিনাইদহ শহর পেরিয়ে বদরগঞ্জ (দশমাইল) বাজার পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কে মাঝে মাঝেই ছাতিমগাছ রয়েছে। তবে সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজ ও রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ এলাকায় বেশি রয়েছে। এখন হালকা শীতের আবেশে এই এলাকা দিয়ে যেতে গেলেই ছুঁয়ে যায় অন্যরকম অনুভূতি।

শরতের শেষে হেমন্তের শুরুতে (আশ্বিন ও কার্তিক মাসে) ছাতিম ফুল ফোটে। ফুলগুলো গুচ্ছবদ্ধ থাকে এবং তীব্র গন্ধ ছড়ায়, যা সন্ধ্যায় বেশি অনুভূত হয়। সন্ধ্যায় শিশির পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ফুল থেকে তীব্র ঘ্রাণ বের হয়। রাত যত গভীর হয়, গন্ধের তীব্রতা তত বাড়ে। গাছগুলো উঁচু হওয়ায় এই ঘ্রাণ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত গ্রাম-বাংলার রাস্তাঘাট, নদীর তীর, বসতবাড়ির অনাবাদি জায়গায় ছাতিমগাছ জন্মে। গাছটির সংস্কৃত নাম সপ্তপর্ণী। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যান, ছাতইন, ছেতেনসহ নানা নামে ডাকা হয়। সম্ভবত ছাতার মতো চারদিকে ছড়িয়ে থাকে বলেই এই গাছের নাম ছাতিম। ছাতিমগাছ ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়। এটি চিরসবুজ দুধ-কষে ভরা সুশ্রী গাছ। পাতা প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা, মসৃণ, ওপরে উজ্জ্বল সবুজ, নিচে সাদাটে। একই মূলাবর্তে চার থেকে সাতটি পর্যন্ত পাতা থাকে।

ছাতিমগাছ ‘অ্যাপোসাইনেসি’ বর্গের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। ইংরেজিতে একে ডাকা হয় ডেভিলস ট্রি নামে। ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টনিয়া স্কলারিস। স্কলারিস শব্দটির সঙ্গে বিদ্যা অর্থাৎ, লেখাপড়ার যোগ আছে। এ ধরনের নামকরণের কারণ, ছাতিমের নরম কাঠ থেকে ব্ল্যাকবোর্ড ও পেনসিল তৈরি হয়। ছাতিমগাছের আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই গাছ বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র জন্মে। গাছটি আর্দ্র, কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে জন্মে। ছাতিমগাছের ছাল ও আঠা জ¦র, হৃদরোগ, হাঁপানি, ক্ষত, আমাশয় ও কুষ্ঠ রোগের জন্য উপকারী।

ঝিনাইদহ বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪-০৫ এবং ২০০৫-০৬ বছরে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের দুপাশে বিভিন্ন স্থানে ৫ শতাধিক ছাতিমগাছের চারা রোপণ করা হয়। সেগুলোই এখন বড় হয়ে সুবাস বিলিয়ে দিচ্ছে।

ঝিনাইদহ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মাঠসংলগ্ন সাগান্না গ্রামের কৃষক আফান মন্ডল বলেন, ‘রাস্তার ধারে আমার কয়েক টুকরো জমি রয়েছে। প্রতিদিন ভোরে আমি খেত দেখতে আসি। ছাতিম ফুলের গন্ধে চারদিক ম-ম করে। খুব ভালো লাগে।’

এই গ্রামের আরিফ নামের এক যুবক বলেন, ‘আমেরচারা বাজার থেকে বৈডাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে প্রচুর ছাতিমগাছ রয়েছে। সব গাছে প্রচুর ফুল ফুটেছে। সন্ধ্যার পর থেকে এই এলাকার বাতাস ফুলের সুবাসে ভরে থাকে। আমরা বন্ধুরা মিলে রাতে এখানে হাঁটতে আসি। এখান থেকে ফিরতে মন চায় না।’

আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজের ঠিক সামনেই রাস্তার ধারে টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি আমেনাদের ঘর। তাদের ঘরের পাশ দিয়েই রয়েছে সাতটি ছাতিমগাছ। আমেনা খাতুন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের ঘরের মধ্যে, উঠানে সব জায়গায় ফুলের গন্ধে ভরে যায়। তখন আমাদের টিনের বাড়িটিকেই স্বর্গের মতো মনে হয়।

ঝিনাইদহ বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ২০০৪-০৫ এবং ২০০৫-০৬ বছরে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কের জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্কের সামনে থেকে বোড়াই গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার ধারে কয়েক হাজার বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয়। তার মধ্যে অনেক ছাতিমগাছও রয়েছে। বাতাস বিশুদ্ধকরণে এই গাছের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া এই গাছের ঔষধি গুণও রয়েছে বলে জানান তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!