ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

শ্রাবণ মাসের শেষে কৃষি কাজের দিকনির্দেশনা

আরফান হোসাইন রাফি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

জমির প্রস্তুতি ও রোপণ কৌশল
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। শ্রাবণের শেষভাগ থেকে ভাদ্রের শুরু পর্যন্ত সময়টা রোপা আমন ধানের জন্য উপযুক্ত। এই সময় ধান রোপণের জন্য জমিতে পরিমিত পানি থাকা দরকার। জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে কাদামাটি তৈরি করে নিতে হয়। তারপর ২৫-৩০ দিনের চারা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চারা রোপণের সময়

অবশ্যই দূরত্ব বজায় 
রাখা উচিত। সাধারণত সারি থেকে সারি ২০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছ ১৫ সেমি দূরত্ব রাখলে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস ও পুষ্টি সরবরাহ হয়। এছাড়া আগাছা দমন ও সঠিক সেচব্যবস্থার মাধ্যমে ধানখেত সুরক্ষিত রাখা দরকার।

রবি সবজির বীজতলা 
এই সময়টা রবি মৌসুমের শাক-সবজির বীজতলা তৈরির জন্য উপযুক্ত। বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন প্রভৃতি সবজির চারা উৎপাদনের জন্য শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজতলা তৈরি করলে অক্টোবরে মাঠে রোপণ করা যায়। বীজতলা হতে হবে উঁচু স্থানে, যাতে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। বীজতলার মাটিতে প্রাকৃতিক সার যেমন গোবর, খৈল, ছাই ইত্যাদি মিশিয়ে নিতে হবে। এতে করে বীজতলায় রোগ-বালাই কমে এবং চারা স্বাস্থ্যকর হয়। কৃষিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, রোগ প্রতিরোধের জন্য বীজ শোধন করে বপন করা উত্তম।

পাট ফসলের সাথী হিসেবে 
সবজি চাষের সম্ভাবনা
নাবী পাট চাষ করার পাশাপাশি জমিতে শাক-সবজি চাষ করে অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব। যেমন- লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা কিংবা ডাটা শাক একসঙ্গে চাষ করা যায়। এগুলো দ্রুত ফলন দেয় এবং জমির উর্বরতা রক্ষা করে। সাথী ফসল চাষ করলে জমির ব্যবহারে বহুমুখিতা আসে এবং একই জমি থেকে একাধিক ফসল ওঠে। এর মাধ্যমে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা হয়, কেননা বিভিন্ন ফসলের উপস্থিতি পোকাদের বিভ্রান্ত করে। 

ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ
শ্রাবণ মাস বৃক্ষরোপণের আদর্শ সময়। যেহেতু এই সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়, গাছ লাগানোর পর স্বাভাবিকভাবে পানি সেচ দিতে হয় না। বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, লিচু, আমড়া, পেয়ারা, নারিকেল, সুপারি ইত্যাদি ফলদ গাছের চারা এই সময় রোপণ করলে তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া বনজ গাছ যেমন- মহুয়া, গামারি, রেইনট্রি, শিরীষ ও বাবলা এবং ঔষধি গাছ যেমন- নিম, তুলসী, অর্জুন, হরীতকী প্রভৃতি রোপণেরও আদর্শ সময় এটি। গাছ লাগানোর আগে গর্ত তৈরি করে সেখানে জৈব সার দিয়ে চারা রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়

রোগবালাই ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
বর্ষাকালে জমিতে বেশি পানি জমে থাকায় অনেক সময় রোগবালাইয়ের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে আমন ধানে ব্লাস্ট, শীথ বলি রোগ, পাতা পচা ইত্যাদির আশঙ্কা থাকে। এসব প্রতিরোধে প্রয়োজন আগাম সতর্কতা। জমিতে পানি আটকে থাকলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া আগাছা জমির পুষ্টি শোষণ করে নিয়ে ফসলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। তাই নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে হাত দিয়ে তুলে ফেলতে হবে, যাতে মূল ফসলের ক্ষতি না হয়।

কৃষকের জন্য পরামর্শ
এই সময় কৃষকদের উচিত স্থানীয় কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। বিশেষ করে নতুন জাতের বীজ, সময়োপযোগী সার প্রয়োগ এবং জলবায়ু-সহনশীল চাষপদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ নেওয়া জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অতিবৃষ্টি, খরা কিংবা অনাকাক্সিক্ষত রোগবালাই মোকাবিলায় দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। এই সময়টা ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- রবি মৌসুমের পরিকল্পনা, জমির পরবর্তী ব্যবহার, নতুন ফসলের সম্ভাবনা ইত্যাদি ঠিক করে রাখা ভালো।