একটি খামারকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাকৃতিক ও সম্পদগত দিক, আর্থ-সামাজিক দিক এবং ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি কৌশলগত দিকের সমন্বয় এবং কার্যকর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। খামার গড়ে তুলতে যে বিষয়গুলো মূল ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের খামারি নওরোজ ফারহান ফাহমি
খামার পরিচালনার বিবেচ্য বিষয়ের প্রাকৃতিক ও সম্পদগত দিকের অন্তর্ভুক্ত হলো- জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, মৃত্তিকা, পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রভৃতি। আর্থ-সামাজিক দিকের মধ্যে পরিবহন ও বাজার সুবিধা, খামারের আয়তন, ধরন, অবস্থান, মূলধন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি কৌশলের অন্তর্ভুক্ত হলো- ডিজাইনভিত্তিক ফসল বিন্যাস ও খামার পরিচালনার সক্ষমতা। কোনো এলাকার মাটি, জলবায়ুর অবস্থা এবং এলাকা বিশেষে চাহিদা অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করতে হবে। ফসল চাষাবাদের উপযোগী তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো পড়ে এমন জায়গায় খামার করতে হবে। মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কেননা কোনো বিশেষ এলাকায় কোন ধরনের খামার উপযোগী তা জমির প্রকৃতি দ্বারাই নির্ধারিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, পাহাড়ের পাদদেশ মাঠ ফসল চাষাবাদের জন্য অনুপযোগী কিন্তু সেখানে ফলমূল উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। ভূমির প্রকৃতি অনুসারে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। নিম্নভূমিতে স্বল্প খরচে নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরির জন্য নদী বা খাল প্রভৃতির কাছাকাছি খামার স্থাপন করা দরকার। শস্য উৎপাদনের জন্য মাটির গুণগত মান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যেমন- দোআঁশ মাটি পাট উৎপাদনের জন্য উপযোগী আবার পলি দোআঁশ মাটি ধান উৎপাদনের জন্য উপযোগী। খামারের অবস্থান যদি কোনো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিকট হয় তবে সে ফসলের খামার লাভজনক হবে। খামারের সফলতার জন্য যোগাযোগ, বাজার ব্যবস্থা, সমবায় পদ্ধতি প্রভৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো সড়ক, উপযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা, বাজারের দূরত্ব ইত্যাদি লাভজনক উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
পুঁজি, ভূমি এবং শ্রমের সহজলভ্যতার উপর খামারের আয়তন নির্ভর করে। খামার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মূলধন। খামার পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত মূলধনের যোগান নির্ভর করে খামার পরিচালকের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার ওপর। নতুন নতুন প্রযুক্তি কৌশলের মাধ্যমে ডিজাইনভিত্তিক ফসল বিন্যাস ও ফসল পর্যায় খামারকে দীর্ঘস্থায়ী করে তুলে। খামার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। যেমন- উৎপাদন মৌসুমে মাঠ ফসলের দাম কম থাকায় তা সংরক্ষণ করে পরে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায়। অর্থাৎ খামারকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে উল্লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।