ঢাকা শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

আদমপুরের বনে সবুজের মাঝে 

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:১৭ এএম

একা বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য অন্যতম নতুন একটি প্রাকৃতিক জায়গা আদমপুর। বন জঙ্গল, প্রাকৃতিক পরিবেশ, সবুজে ঘেরা পরিবেশ আপনাকে মনোমুগ্ধ করবে। বনের মাঝে প্রবেশ করলেই অনেক চেঁচামেচি কানে আসবে; ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বনের গহীনে গেলে চশমা হনুমান ও মুখপোড়া হনুমানদের দেখা যায়। এ বনে উল্লুক দেখা যায় কদাচিৎ। তবে গভীর বনে এদের চেঁচামেচি শোনা যায়।  এ ছাড়া বনে আছে ভল্লুক। তবে মাঝে মধ্যে এদের আক্রমণের খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া নানারকম পাখিও দেখা যায় এ বনে। আদমপুর বনের ভেতরেই আছে বড় বড় বাঁশ মহাল। মুলি, মিটিঙ্গা, ডলু, রূপাই জাতের বাঁশ এ বনে বেশি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ছড়াপথে এ বনের বাঁশ নামানো হয়।

দুই টিলার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে হাঁটাপথ। এই জঙ্গলের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে যেতে হবে কমলগঞ্জ। এটি সিলেট বন বিভাগের অধীন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এ বনেরই একটি বিটের নাম আদমপুর। সীমান্ত ঘেঁষা এ জঙ্গলের মাঝ দিয়ে দেখা যায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। স্থানীয় মানুষজনের কাছে এ বন কাউয়ার গলা বন নামেই বেশি পরিচিত। রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চারটি বিটের মধ্যে আদমপুরই সবচেয়ে বড়। আয়তনে ১৩ হাজার ৮০ একর।

বনটি চলে গেছে একেবারে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত। বেশিরভাগই উঁচুনিচু টিলাজুড়ে আদমপুরের জঙ্গল। বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে চলে গেছে হাঁটাপথ। কোথাও কোথাও দুই টিলার মাঝখান থেকেই চলে গেছে পথ। চলতে চলতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বানর। আরও আছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, ভল্লুক, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি। আদমপুর বন বেশ নির্জন। মানুষের আনাগোনাও খুবই কম। বনের পাশেই আছে খাসিয়াপুঞ্জি। এখানকার মানুষেরা দৈনন্দিন কাজে বনে যায়। জঙ্গল ভ্রমণের ফাঁকে ঢুঁ মারতে পারেন এই জায়গায়। এ ছাড়া আদমপুর বনের আগে সড়কের দুইপাশে আছে অনেক আগর বাগান। আদমপুর বনে ঘুরলে  উঁচু উঁচু গাছ, বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্ম, এবং নানা প্রজাতির উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়।  

এই অঞ্চলে বন্য প্রাণীরগুলোর মধ্যে মেঘলা চিতা, উল্লুক, বিভিন্ন প্রজাতির বানর (যেমন হনুমান), এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী এখানে বসবাস করে। যদি ঘুরে আসেন তবে দেখতে পারবেন কিছু অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য ছড়া, পাহাড়ি পথ, এবং উঁচু গাছের সারি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও দেখা পাওয়া যায়। দুপুরের দিকে বনে যদি আপনি ঘুরে বেড়ান সূর্যের আলো বনের মাঝে যখন উঁকি দেয় অপরূপ একটা দৃশ্য চোখে পরে। তার মাঝে পাখির শব্দ তো আছেই।

আদমপুর বনের আকর্ষণ হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে ঘন গাছপালা, বন্যপ্রাণী ও পাখির উপস্থিতি বনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। নদী ও ঝর্ণার মধ্যে আছে বনের ভেতরে নদী ও ঝর্ণা থাকতে পারে, যা বনের সৌন্দর্য আরও বাড়ায়। বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী ও পাখি এখানে দেখা যায়। বনের পাশেই আছে খাসিয়াপুঞ্জি। এখানকার মানুষেরা দৈনন্দিন কাজে বনে যায়। জঙ্গল ভ্রমণের ফাঁকে ঢুঁ মারতে পারেন এই জায়গায়। এছাড়া আদমপুর বনের আগে সড়কের দুইপাশে আছে অনেক আগর বাগান। এই সবুজের মাঝ থেকে আপনাকে ফিরে আসতে মন চাইবে না। 

কীভাবে যাবেন

প্রথমে যেতে হবে শ্রীমঙ্গল কিংবা কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ থেকে দশ কিলোমিটার দূরের এ বনে যাওয়া যায় অটোরিকশায়। চালককে বলতে হবে কাউয়ার গলা বিট অফিসের কথা। নিজস্ব বাহন নিয়ে গেলে জঙ্গলের একেবারে মুখে যাওয়া যাবে। শুকনা মৌসুমে গাড়ি নিয়ে বনের বাংলোর সামনে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

আদমপুর বনের ভেতরেই আছে বনবিভাগের পরিদর্শন বাংলো। সিলেট বনবিভাগীয় কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়ে এ বাংলোতে রাতে থাকা যায়। এ ছাড়া সারাদিন জঙ্গলে বেড়িয়ে রাতে থাকতে পারেন কমলগঞ্জ কিংবা শ্রীমঙ্গল। তবে কমলগঞ্জ থেকেই আদমপুরের দূরত্ব কম। আদমপুর বনের আশপাশে কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যেমন- মায়াবন, এটি একটি প্রাকৃতিক লেক, যা আদমপুর বনের কাছাকাছি অবস্থিত। সাদা পাথর; এটি সাদা পাথরের জন্য পরিচিত একটি স্থান, যা বর্তমানে পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।