ঢাকা শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

ঘুরে আসুন ফুলের রাজ্যে 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৫:২৩ এএম

ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ফুল সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতার প্রতীক, তাই মানুষ ফুল ভালোবাসে। শহরের মানুষদের ফুলের দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ফুলের ঘ্রাণ ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায়। তাদের কাছে খেত ভর্তি ফুল দেখাটা যেন স্বপ্নের মতো। ঢাকার খুব কাছে আছে ফুলের গ্রাম। জায়গাটা নারায়ণগঞ্জ শহরের আগে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত বন্দরের সাবদি এলাকা। সেখানে অল্প খরচে দেখা যায় নানা রকমের ফুলের বাগান। 

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সাবদি, দিঘলদী গ্রামের অবস্থান। গ্রামগুলোর পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের পশ্চিম ধারে সারি সারি কাঠমালতি ফুলের বাগান। বর্তমানে ফুল চাষের জন্য বহুল পরিচিত নারায়ণগঞ্জের এই সাবদি গ্রামটি। এখানে শীতের সময় সরিষা চাষ করা হয়। সরিষা মানেই হলুদের সমারোহ। ভ্রমণপ্রিয় এবং ছবি তুলতে পছন্দ করা মানুষদের জন্য সাবদি খুবই সুন্দর একটি জায়গা। শীতকালে এখানে সরিষা চাষ করা হলেও ফেব্রুয়ারির দিকে চাষ করা হয় নানা রকমের ফুল। রঙবেরঙের ফুলে ছেয়ে যায় খেতগুলো। সাবদি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে গেলে দেখা যায় গ্রামের বাড়ির আঙিনা ও রাস্তার পাশ ঘেঁষে টগরফুলের বাগান। গ্রামটির কয়েক বর্গমাইল এলাকাব্যাপী কাঠমালতি, গাঁদা, ডালিয়া ও জিপসি ফুল চাষ করতে দেখা যায়। এত ফুল একসঙ্গে দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে।

বিভিন্ন দিবস ঘিরে প্রতি বছরই এখানকার ফুলের ব্যবসা চাঙ্গা হয়। এ বছর ৮০ হেক্টর জমিতে আড়াইশ থেকে তিনশ চাষি ফুলের চাষাবাদ করেছেন। 

জানা যায়, বন্দরের উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি গ্রামে সবচেয়ে বেশি ফুল চাষ হয়। তবে আশপাশের দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলা গ্রামের ৮০ হেক্টর জমিতে নানা জাতে ফুল চাষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে রজনিগন্ধা, গাঁদা গ্লাডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতি, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর ও রক্তজবা।

শহরের কোলাহল থেকে ক্লান্তি দুর করতে এক টুকরো কোলাহলবিহীন শান্তির জায়গা হতে পারে এই সাবদি। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে টঙ-দোকান তৈরি করে বিক্রি হচ্ছে খাবার। সাবদির অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার বৌয়া ও ভর্তা। প্রতি শুক্রবার সকালে সাবদি বাজারে পাওয়া যায় বাঙালির পছন্দের বৌয়া ভাত ও ভর্তা। ফুল চাষ করে বদলে গেছে অনেক পরিবারের আর্থিক অবস্থা। পুরুষ থেকে শুরু করে এই গ্রামের নারী এবং বাচ্চাদেরও দেখা যায় বাগানগুলোতে কাজ করতে।

তারা কেউ কেউ নিজেদের বাগানে কাজ করে আবার কেউ দৈনিক মজুরি হিসেবেও কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। নারীরা সাংসারিক সুখ-দুঃখের আলাপচারিতার মধ্যে ডালা ভরে ফুল তুলে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। কাঠমালতির ফুল দিয়ে ‘গাজরা’ ও ফুল দিয়ে মালা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সাবদির নারীরা।

সাবদিতে শুক্রবারে বেশি ভিড় জমে দর্শনার্থীদের। তখন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ফুলের মালা বিক্রি করতে দেখা যায়। সাবদির উৎপাদনকৃত ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় চাষিদের ব্যস্ততা খুব বেড়ে যায়। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে একাধারে কয়েকটি দিবস পালিত হয়। ভালোবাসা দিবস, ফাল্গুন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই মাসেই। তাই এ সময় চাষিরা ফুল বিক্রি করে বেশ লাভবান হন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। আর এ কারণে ফুল চাষের প্রতি চাষিদের আগ্রহ বেশি। 

কেউ যদি সকালে এখানে আসেন বিকেল পর্যন্ত থাকেন। তাদের মন ভরে যাবে। তারা এখানে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন। ঘুরতে পারবেন। গ্রামীণ পরিবেশ দেখতে পারবেন। এ রকম ঢাকাতে পাওয়া যায় না। সাবদি এলাকায় ঘুরলে ফুলের গন্ধে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে।