জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকা-ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪৫ আসামির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরও তিন মাস সময় বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তৃজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে সময়ের আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল রোববার সকালে জুলাই-আগস্টে হত্যা-গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক সাত মামলায় গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব মো. জাহাংগীর আলম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর মধ্যে আদালতে হাসানুল হক ইনু অভিযোগ করেন, কারাগারে ডিবি কর্মকর্তারা আদালতের নির্দেশনা ছাড়া তার গলার স্বর পরীক্ষা করেছেন। তবে চিফ প্রসিকিউটর আদালতকে জানান, এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের পূর্বের আদেশ রয়েছে এবং তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে আইন অনুযায়ী এই পরীক্ষা করতে পারেন।
ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় বসা অবস্থায় আসামিদের একে অপরের সঙ্গে গল্প করতে দেখা যায়। সবাইকে উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন আসামি পলাতক থাকায় তাদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, গত জুনে কারাগারে তার কণ্ঠ পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু আদালতের কোনো আদেশ দেখানো হয়নি। এটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ট্রাইব্যুনাল তখন তাকে বলেন, আপনার কিছু বলার থাকলে লিখিত আবেদন করেন। আমরা দেখব। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, একটি রেকর্ড ফরেনসিক করতে গিয়ে তার (হাসানুল হক ইনুর) কণ্ঠ পরীক্ষা করতে হয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ ছিল। সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আবারও বলেন, আমাকে সেই আদেশ দেখানো হয়নি।
এর প্রতিক্রিয়ায় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আইনজীবী থাকার পরও আসামি আদালতে এভাবে কথা বলতে পারেন না। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে কারও বক্তব্য শুনতে পারি।’ পরে এই ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫ অক্টোবর পরবর্তী দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।