- বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
- সড়ক অবরোধের কারণে যানজটে দিনভর চরম ভোগান্তি
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল বুধবার দিনভর চলা সমাবেশে সারা দেশ থেকে কয়েক সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ৩টার দিকে সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয়করণের জন্য এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্দোলনরত শিক্ষকদের জানিয়েছেন, তাদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে শিক্ষকেরা এখন যে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পান, তা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির দুপাশ অবরোধ করে সমাবেশের কারণে যান চলাচল ছিল বন্ধ। তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে হাইকোর্ট, পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই সমাবেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা জানানÑ আমাদের একটাই দাবি, এমপিওভুক্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সিলেট থেকে আসা শিক্ষক আব্দুল মুমিন বলেন, ২০১৮ সালে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পর তৎকালীন সরকার ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা পরে কার্যকর হয়। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তী মেয়াদে জাতীয়করণ করা হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও আগের সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।
শিক্ষকেরা জানান, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির মধ্যেই ২২তম দিনে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপদেষ্টা উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বাড়ানো এবং আগামী বাজেটে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা কার্যকরের ঘোষণা দেন। বাজেটে এই বরাদ্দ থাকলেও এখনো সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
পরে দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও শিক্ষাসচিব মজিবর রহমান। এ সময় শিক্ষকদের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।
বৈঠক শেষে জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সাংবাদিকদের বলেন, এক মাসের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অর্ধদিবস এবং ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালান করা হবে। তাতেও না হলে ১২ অক্টোবর থেকে প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
সদস্যসচিব বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বাড়িভাড়া ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ করে ডিউ লেটার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তারা বলেছে, সব দাবি একবারে পূর্ণ করা সম্ভব নয়। আমরা এই দাবিগুলো পূরণে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। প্রস্তাব রেখেছি, আমাদের বাড়িভাড়া পার্সেন্টেজ হিসেবে বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়িয়ে অর্থ মন্ত্রণালযয়ে পাঠানো হবে। চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে ১০০০ করা হবে। আমরা এ বিষয় নিয়ে আর বেশি কিছু বলিনি। আমরা বাড়িভাড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। যদি আমাদের দাবিগুলো মেনে অর্থ মন্ত্রণালযয়ে ডিউ লেটার পাঠানো না হয়, তাহলে আমরা নতুন কর্মসূচিতে যাব।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন