সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৬:৪০ এএম

মাদক ও অস্ত্র শনাক্তে রেলস্টেশনে বসেছে লাগেজ স্ক্যানার  

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৫, ০৬:৪০ এএম

মাদক ও অস্ত্র শনাক্তে রেলস্টেশনে বসেছে লাগেজ স্ক্যানার  

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথ মাদকের নিরাপদ রুটÑ গত ২৩ এপ্রিল এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রূপালী বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, লাগেজ স্ক্যানারসহ যাত্রী তল্লাশির সুযোগ না থাকায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথের মধ্যবর্তী স্টেশনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি কম থাকার কারণে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথকে মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক কারবারিরা। মাদক পরিবহনের জন্য সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসকেই অধিকতর নিরাপদ মাধ্যম মনে করছে তারা। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, কক্সবাজার যেহেতু পর্যটননির্ভর সমুদ্রবেষ্টিত এলাকা, সেহেতু পাচারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। হোক সেটা রেলওয়ে স্টেশন কিংবা বিমানবন্দর। 

রূপালী বাংলাদেশে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেলস্টেশনে স্ক্যানার বসানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় গত জুলাই মাসে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা স্টেশনে বসানো হয় মাদক ও অস্ত্র ডিটেক্টর মেশিন। শুধু তাই নয়, স্ক্যানার চালানোর জন্য আরএনবিসহ রেল কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিষয়টি এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিজি) অপারেশন নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে মাদক পাচারের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে তিনটি স্টেশনে ডিটেক্ট ‘অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ ব্র্যান্ডের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্ক্যানার বাসানো হয়েছে। যার মাধ্যমে মাদক এবং অস্ত্র শনাক্ত করা সম্ভব হবে।     

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা রেলস্টেশনে যে তিনটি ডিটেক্টর মেশিন বসানো হয়েছে তা আনা হয়েছে আমেরিকা থেকে। ‘অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ ব্র্যান্ডের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই স্ক্যানারগুলো মাদক, অস্ত্র ও চোরাই পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম। 

তবে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রের দাবি, দক্ষ অপারেটরশূন্যতায় ভুগছে তিন স্টেশনে সদ্য লাগানো সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনগুলো। অপারেটর স্বল্পতার কারণে এখনো কাজই শুরু হয়নি চট্টগ্রাম ও ঢাকা স্টেশনে। 

কক্সবাজার থেকে কোনো একসময় বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোসহ ব্যক্তিগত যানবাহনে মাদক পাচার হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সড়কপথে আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে মাদক পরিবহন। বারবার অভিযান পরিচালনা করেও আশানুরূপ মাদক উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছে র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর। পর্যটকবাহী প্রবাল ও সৈকত এক্সপ্রেসকে মাদকের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বাড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন বিশেষজ্ঞরা। 

র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সৃষ্টিশীল নান্দনিকতার আবহে কক্সবাজারের রেলওয়ে স্টেশনকে তৈরি করা হলেও নিরাপত্তাসহ মাদক পাচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয় অপূর্ণ রেখেই ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লাগেজ স্ক্যানারসহ যাত্রী তল্লাশির ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনপথ উদ্বোধন মাদক কারবারিদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্টেশন ষোলশহর, জালালীহাট, গোমদ-ি, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামুতে আইনশৃংখলা বাহিনীর দৃশ্যমান তদারকি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে রেলপথ চালু হওয়ার পর সড়কপথে আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় মাদক পরিবহন। বারবার অভিযান চালানোর পরেও আশানুরূপ মাদক উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিষয়টি স্বীকার করে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চেলের সহকারী পরিচালক (এডি) কাজী দিদারুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেনপথ চালু হওয়ার পর সড়কপথে মাদক পাচার কমে গেছে। যে কারণে আমাদের উদ্ধারের হারও কমেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনপথ উদ্বোধনের পর কক্সবাজার স্টেশনে দুটি লাগেজ স্ক্যানার বসানোর জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ের সাবেক পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান। দেড় বছর সময় পেরিয়ে গেলেও টনক নড়েনি রেল কর্তৃপক্ষের। চলতি বছর মার্চ মাসে বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা সভায় স্ক্যানার বসানোর বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তুলে ধরেন পুলিশ সুপার। 

রেল দিয়ে মাদকসহ অন্যান্য জিনিস পাচার অধিকতর সহজ। কারণ ট্রেন আসার পর যাত্রীদের একটা চাপ থাকে, যে কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সবাইকে তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, রেলওয়ে পুলিশে কর্তব্যরত পুলিশের সংখ্যাও নগণ্য। এই অল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে সমুদ্রবেষ্টিত বিদেশি পর্যটকসমৃদ্ধ একটা জোনের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা কঠিন। কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনকে বিমানবন্দরের আদলে নিরাপত্তাব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া জরুরিÑ যোগ করেন তিনি। প্রস্তাবনার পরও স্ক্যানার বাসানোর বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়নি মন্ত্রণালয়। যে কারণে মাদক পাচারের সহজ মাধ্যম হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। 

মাদক ও অস্ত্র শনাক্ত করতে তিনটি স্ক্যানার বসানো হয়েছে জানিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সুবক্ত গীন বলেনÑ আমরা আশা করছি, এর মাধ্যমে রেলে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। 

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী ফরহাদুল নামে এক যাত্রী এই প্রতিবেদককে বলেন, স্টেশনে বসানো স্ক্যানারটি ওষুধজাত দ্রব্য, মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র ও চোরাই পণ্য শনাক্তে সক্ষম। মেশিনে কিছু শনাক্ত হলে তবেই ব্যাগ খোলা হচ্ছে। শনাক্ত না হলে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাগ তল্লাশি করার কথা বলে হয়রানি বন্ধ হয়েছে। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!