রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতাধিক। এই ঘটনায় পুরো দেশ শোকে স্তব্ধ। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন তারকারাও।
দুর্ঘটনার পরে সোমবার রাতে আর ঘুমাতে পারেননি অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া বাবা-মা সবচেয়ে বড় অসহায়। কারণ তারা সার্বক্ষণিক এক যুদ্ধের মধ্যে থাকেন। আমার ধারণা, কোনো মানুষ কাল (সোমবার) রাতে ঘুমাতে পারে নাই। সব মা-বাবা এবং অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ অসহায়ভাবে জেগে ছিল। সবার গলার কাছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কালো ধোঁয়া দলা পাকিয়ে আছে, সেটা না পারা যায় গিলতে, না পারা যায় সহ্য করতে!’ এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া মা-বাবা সবচেয়ে বড় অসহায়। কেউ কল্পনাও করতে পারে না সেই মা-বাবার সার্বক্ষণিক যুদ্ধ। এ ছাড়াও যে মা-বাবার অর্থনৈতিক হিসাব কষে চলতে হয়, রিকশা/সিএনজি/বাসে চড়তে হয়, তাদের জীবন আরও দ্বিগুণ কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘বাচ্চার জন্মের পর থেকেই ভাবতে হয়, কোন স্কুলে পড়াতে পারব, কীভাবে ভর্তি করব, বাসা সেখান থেকে কতটা দূরে, যাওয়া আসা কীভাবে হবে, উপার্জনের সঙ্গে মিলবে কি-না সব ইত্যাদি বিশদভাবে। ভর্তি করতে পারলে এক রকম, না পারলে অন্য রকম কষ্ট। স্কুল, কোচিং বিজনেস, সামাজিকতা, ঘরকন্না সব মিলিয়ে জীবনের সব দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। সন্তানের প্রয়োজনে তখন হয় মা বাবার সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত। পিতা-মাতা হওয়ার অপার স্বপ্নের আনন্দ স্কুল-কলেজ কোচিং-এর টাকা গুনতে গুনতে ঝাপসা হয়ে যায়।’
ঢাকা শহরের বাবা-মায়ের জীবনে সন্তান ছাড়া কোনো স্পেস নাই উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সব মা-বাবারই যুদ্ধ করতে হয়, কিন্তু ঢাকা শহরের মা-বাবার জীবনে সন্তান ছাড়া কোনো স্পেস নাই। তাদের নানান দুর্ভাবনার মধ্যে কিছুক্ষণের ভাবনার থেকে মুক্তির জায়গা স্কুল। সেখানে বাচ্চাদের দিয়েই কেউ কাজে যায়, বাজারে যায়, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে দৌড়ে সব দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করে, অতঃপর আবার দৌড়ে স্কুলে-কোচিংয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘এ বাঁচার মানে কেউ বুঝবে না! কেউ জানে না মা-বাবার সন্তানই কোনো পূর্ণতা-কি অপার শূন্যতা! অল্প কিছুদিনে মধ্যে বরাবরের মতোই সবাই সব ভুলে যাবে, স্বাভাবিকভাবেই চলবে সব। শুধু মা-বাবার বুকেই জ্বলবে এ আগুন আমৃত্যু-মাইলস্টোন স্কুলের ধোঁয়া তাদের নিঃশ্বাস-চোখ থেকে কোনোদিন সরবে না! আহারে আমাদের কলিজা ছেঁড়া ধন! হায়-রে আমাদের মা-বাবা হওয়ার আজন্ম অসহায়ত্ব!’
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার পরে প্যানিক অ্যাটাকডের শিকার চিত্রনায়িকা পরীমণি। রাতেই তাকে ভর্তি করা হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। সে কথা জানিয়ে পরী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার আগুনের একটা ট্রমা আছে ছোটবেলা থেকে। সেটা যে এখনো এত ভয়ংকরভাবে আছে, তা বুঝতে পারি নাই। দুর্ঘটনায় ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর পোড়া শরীরের ছবি/ভিডিও দেখে আমার খুব খারাপভাবে প্যানিক অ্যাটাক হয়! রাতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। বুকের ভেতর ধরফর করে শুধু। আহারে এই শোক ওই মায়েরা কীভাবে সহ্য করবে আল্লাহ! আল্লাহ!’
বলা প্রয়োজন, চিত্রনায়িকা পরীমণির মা অগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। সেই ট্রমার কথা হয়তো আজও ভুলতে পারেননি নায়িকা।
নিজের মেয়েকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে তাসনুভা তিশা কান্নায় ভেঙে পড়েন। লাইভে তিশা বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে যে তারা আমার সন্তান। দোয়া করবেন, বাচ্চাগুলোর জন্য আল্লাহ সবকিছু ঠিকঠাক রাখুক। এ বাচ্চাগুলো অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আমার মেয়েকে ভাবছিলাম মাইলস্টোনে ভর্তি করাব, আমার এটা চিন্তা করতে এখন কলিজা কাঁপছে।’শার ভাষ্য মতে, ‘আমি আসলে কী করব, কিছু করার নেই। আমি এখন একটা নাটকের
শুটিংয়ে আছি, বসে থেকে একটার পর একটা নিউজ দেখছি। আমি এটা অনুভব করতে পারি, আমার নিজের বাচ্চারা আছে।’
এরপর যোগাযোগ করা হলে তিশা বলেন, ‘এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও দেখার পর ফেসবুকে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। গত রাতে ঘুমাতে পারিনি। মুখগুলো চোখে ভাসে।’