ঢাকা শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে কবে?

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৭:২৮ এএম

দীর্ঘ ৮ বছরেও শেষ হয়নি শরীয়তপুরের নড়িয়ায় কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ। কাজ সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় পরিবর্তন করা হয়েছে ঠিকাদার। সেতুটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর পালিয়ে যান ঠিকাদার। ফলে শঙ্কা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে লাখো মানুষকে। এ ভোগান্তির যেন শেষ নেই!

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলাবাসীর সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭ সালে নড়িয়া সদরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। তবে সেটি ঝুঁঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১৫ সালে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ২২২ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি, যার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কন্সট্রাকশন।

কাজের কিছুটা অগ্রগতি শেষে ব্রিজের নকশা জটিলতায় এবং সময়ক্ষেপণ হওয়ায় ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিল উত্তোলন শেষে কাজ করা বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পুনরায় ২৮ কোটি ৮৬ লাখ চুক্তিমূল্য ধরে সেতুটি নির্মাণে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনূর এন্টারপ্রাইজকে। তবে সেই প্রতিষ্ঠান সেতুটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর পালিয়ে যায়।

এর পর থেকেই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এমনকি পাশে তৈরি হওয়া ফুট ওভারব্রিজটির কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চলাচলকারী মানুষ। একটি মাত্র সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষকে পারাপার হতে হচ্ছে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের পাশাপাশি ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি জানা গেছে, পুরোনো ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করে কাজটি সম্পন্ন করতে পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলে আবারও নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নড়িয়ার বড় একটি এলাকা সেতুটির পশ্চিম পাশে অবস্থিত। আর নড়িয়া শহরটির মূলকেন্দ্র পূর্ব পাশে হওয়ায় স্কুল-কলেজ, বাজারসহ সব কাজে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে পাড়ি দিতে হয় কীর্তিনাশা নদী। এ ছাড়া নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের মানুষকে ঢাকায় যেতে এই নদী পার হয়ে ওপার থেকে বাসে উঠতে হয়। এতে করে তাদের ভোগান্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক গুণ। পাশাপাশি মালামাল পরিবহনে বেগ পেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

প্রতিদিন নদী পার হয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছে, নৌকায় পার হয়ে স্কুলে আসতে ভীষণ ভয় হয়। মাঝেমধ্যে ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বর্ষার সময় বৃষ্টিতে বই-খাতা ও জামা-কাপড় ভিজে যায়। অনেক দিন ধরে সেতুটি না হওয়ায় আমরা অনেক সমস্যায় আছি।

নড়িয়া বাজারের আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, একটা সময় নড়িয়া বাজার জমজমাট ছিল। বাসেই ঢাকা থেকে আমরা নিত্য মালামাল নিয়ে আসতাম। নতুন সেতু তৈরির জন্য পুরোনো সেতু ভেঙে ফেলার পর বাজারে এখন তেমন ক্রেতা আসে না। তা ছাড়া সেই শরীয়তপুর শহর ঘুরে আমাদের মালামাল নিয়ে আসায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। দ্রুত ব্রিজটির কাজ শেষ না হলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ঢাকাগামী কয়েকজন যাত্রী বলেন, ট্রলারে নদী পার হয়ে বাসে উঠতে হয়। আগের পুরোনো সেতু দিয়ে অটোরিকশা চলাচল করলেও ভেঙে ফেলার পর এখন ট্রলারই একমাত্র ভরসা। তা ছাড়া নদীটিতে অনেক বালুবাহী নৌকা চলাচল করায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। আমরা চাই, দ্রুত ব্রিজটি চালু করা হোক।

কয়েকজন বাসচালক ও সহকারী (হেলপার) বলেন, এই অঞ্চলে মানুষের যাতায়াতে সুবিধার জন্য এবং বাস চলাচলের সুবিধার জন্য দ্রুত সেতুটি চালুর দাবি জানাই।

এলজিইডি শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, দুর্ভোগ লাঘবে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সেতুর বাকি কাজ শেষ করার মৌখিক আশ্বাসে দুই দফায় ব্রিজের ঠিকাদার পরিবর্তন করতে হয়েছে। সম্প্রতি পুরোনো ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। কাজটি সম্পন্ন করতে পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ চলছে।