ঢাকা শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

গাজায় দুর্ভিক্ষের বর্ণনায় এক মা

‘আমার ছেলে জানে না ফলের স্বাদ কেমন’

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
গাজায় দুর্ভিক্ষের ছবি। সংগৃহীত

‘গত পাঁচ মাস ধরে আমরা কোনো আমিষ খাইনি। আমার ছোট ছেলের বয়স চার বছর। কিন্তু সে জানেই না যে ফলমূল আর সবজি দেখতে কিংবা খেতে কেমন হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন গাজা শহরে পাঁচ সন্তান নিয়ে বসবাসরত ৪১ বছর বয়সী নারী রীম তৌফিক খাদার।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় সম্পূর্ণভাবে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, গাজা উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এখন ক্ষুধা, চরম দারিদ্র্য ও মৃত্যুর মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজায় সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসরায়েল ব্যাপকভাবে বাধা দিচ্ছে। তবে ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। গাজাজুড়ে যে অনাহার চলছে, সেকথাও ইসরায়েল অস্বীকার করেছে যা ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী, শতাধিক মানবিক গোষ্ঠী ও জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।

গাজায় ছয় সন্তানের মা রাজা তালবেহ অনাহারে ২৫ কেজি ওজন হারিয়েছেন। শহরের জেইতুন এলাকায় তার বাড়ি ছিল। এক মাস আগে ইসরায়েলি হামলা তাকে ওই স্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে। এখন তিনি সমুদ্রের ধারে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকছেন। তার শরীর গ্লুটেন মানে শস্য জাতীয় খাবার সহ্য করতে পারে না। তাই বাজারে বা আশেপাশে তার খাওয়ার মতো খাবার খুঁজে পাওয়াটা এখন কঠিন বিষয় হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধের আগে একটি দাতব্য সংস্থা আমাকে গ্লুটেন-মুক্ত খাবার পেতে সাহায্য করতো। কারণ ওই খাবার কিনে খাওয়া আমার সাধ্যের বাইরে ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমার যা দরকার, আমি তা বাজারে পাই না। আর পেলেও কিনতে পারি না। প্রতিদিন বোমাবর্ষণ, বাস্তুচ্যুত জীবন, গরম ও শীত থেকে রক্ষা করতে পারে না এমন এক তাঁবুতে এভাবে থাকা, এর ওপর আবার দুর্ভিক্ষ, এগুলো কি যথেষ্ট নয়?

২৯ বছরের রিদা হিজেহ জানান, তার পাঁচ বছরের মেয়ে লামিয়ার ওজন ১৯ কেজি থেকে নেমে সাড়ে দশ কেজি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের আগে লামিয়ার কোনো রোগ ছিল না। সবকিছুই হয়েছে কেবল দুর্ভিক্ষের কারণে। একটি শিশুর খাওয়ার মতো কিছুই নেই। কোনো সবজি নেই, ফল নেই।

তিনি আরও বলেন, লামিয়া এখন পা ফোলা, চুল পড়া ও স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে। সে হাঁটতে পারে না। আমি বহু ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, ক্লিনিক-হাসপাতাল ঘুরেছি। তারা সবাই বলেছে, আমার মেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে। কিন্তু তারা কেউ কিছু দেয়নি। না চিকিৎসা, না কোনো সহায়তা।

ইউকে-মেড নামের একটি ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থার হয়ে গাজায় কাজ করছেন ব্রিটিশ নার্স ম্যান্ডি ব্ল্যাকম্যান। তিনি বলেন, মাতৃত্বকালীন, প্রসবের আগে ও প্রসবপরবর্তী অবস্থায় যেসব মায়েরা ক্লিনিকে আসেন, তাদের ৭০ শতাংশের শরীরে অপুষ্টি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের আকার ছোট হচ্ছে এবং তারা বেশ নাজুক।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২৭১ জন দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে মারা গেছে, যাদের মধ্যে ১১২ জন শিশু। এছাড়া, গাজায় খাবারের খোঁজে ত্রাণকেন্দ্রে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় এ নিয়ে ২০৬০ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার ২ শত ৬৩ জন।