*** রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন
*** কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই ওয়াসা কর্তৃপক্ষের
*** প্রতিদিন পানির চাহিদা ১৩ কোটি লিটার, সরবরাহ ১০ কোটি ৭০ লিটার
*** পানি অপচয়ের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি নিচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর
রাজশাহী নগরীতে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। আবার যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয় তা থেকে ২৮ শতাংশ পানি বিভিন্নভাবে অপচয় হচ্ছে। পানির অপচয় ঠেকাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। খড়াপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির স্তর ইতোমধ্যেই নি¤œগামী। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্নভাবে পানির অপচয়ের কারণে এই অঞ্চলে পানি সংকট দেখা দেয়। তাই রাজশাহীতে যেকোনো ধরনের পানি অপচয় রোধ করা জরুরি।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১৩ কোটি লিটার। এর বিপরীতে প্রতিদিন সরবরাহ হয় ১০ কোটি ৭০ লাখ লিটার পানি। ফলে নগরীতে একদিনে ঘাটতি থাকছে ২ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি। এরমধ্যে মোট সরবরাহের ২৮ শতাংশ পানি বিভিন্নভাবে অপচয় হচ্ছে। অপচয়কৃত পানির কোনো মূল্য ওয়াসা পান। এতে পানি অপচয়ের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তাই পানির অপচয় রোধ করতে না পারলে বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষতিসাধন হবে। এর দায়ভার প্রাণ-প্রকৃতির ওপর পড়বে।
স্থানীয়রা জানায়, তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে প্রায় তিন বছর আগে পাকা সড়ক হয়। সড়কের নিচে পড়ে যায় ওয়াসার পানির পাইপ। সে সময় পাইপটি ফেটে যায়। ওয়াসার লোকজন এসে মেরামত করে গিয়েছিল, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। বরং ফাটল প্রসারিত হয়েছে। স্থানীয়রা ওয়াসায় কয়েক দফা অভিযোগও জানায় তাতে কাজ হয়নি। ফলে এক বছরের বেশি সময় ধরে এভাবে পানি ড্রেনে পড়ছে। এ ব্যাপারে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ চরম উদাসীন বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় জনতা।
রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ৩ কোটি লিটার পানি অপচয় হয়। এরমধ্যে চুরি সংযোগ ছাড়াও পাইপ লিকেজের বিষয় অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া অনেক বস্তি এলাকায় ওয়াসার পানি ব্যবহার হয়। সেই পানির বিল ওয়াসা নেন না। বিল না পাওয়া পানিকে অপচয় বলছে ওয়াসা। যা মোট পানির সরবরাহের ২৮ শতাংশ। প্রতিদিন সকাল ৬টায় ওয়াসার পানি সরবরাহ পাম্প চালু করা হয়। চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ওয়াসার কর্মকর্তাদের দাবি ১২ ঘণ্টা চলে পানি সরবরাহের পাম্প।
নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা পারভেজ ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এখানে ওয়াসার পাইপ ফেটে পানি বের হয়। ফাটা পাইপের পানি ড্রেনে পড়ে। এখানে ড্রেন না থাকলে পানি সড়কে জমে থাকত। কিন্তু প্রতিদিন প্রচুর পানি অপচয় হয়। কেউ খোঁজ নেন না। রিজভী ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এমন অবস্থা। সব সময় পানি বের হয়ে নহরে (ড্রেনে) পড়ে। এক বছরের বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ওয়াসা একবারও মেরামত করতে আসেনি।
একই এলাকার গুলু ইসলামের বাড়ির সামনের নহরের ওপর দিয়ে যাওয়া ওয়াসার স্টিল পাইপের জয়েন্টে সমস্যা থেকে দীর্ঘদিন থেকে পানি বের হয়। এ নিয়ে তারা ওয়াসায় অভিযোগ দিয়েছেন। চার মাস আগে ওয়াসার কর্মীরা মেরামত করে গেছেন। কিন্তু পানি বন্ধ করতে পারেননি তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাজশাহী নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা প্রায় ১৩ কোটি লিটার। বর্তমানে ওয়াসা সরবারহ করছে ১০ কোটি ৭০ লাখ লিটার। এরমধ্যে ৩ কোটি লিটার বিল পায় না ওয়াসা। এ ছাড়া রাস্তার পাশে উন্মুক্ত পানি ট্যাবের পানি সরবরাহ ও লাইন লিকেজের কারণে পানি অপচয় হচ্ছে। যা মোট সরবরাহের ২৮ শতাংশ পানি। অচিরেই আমরা যে সব স্থানে পানির বিল নেওয়া হয় না সেগুলো বিলের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন থেকে পাইপলাইন সচল থাকায় লিকেজ হতে পারে সেগুলো মেরামত করার জন্য একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা অচিরেই লাইন লিকেজ মেরামত বা নতুন করে স্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক (অব.) প্রখ্যাত গবেষক ও পরিবেশবিদ প্রফেসর ড. সারওয়ার জাহান সজল দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, খড়াপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতিনিয়ত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই যে কোনোভাবে পানি অপচয় হলে তার প্রভাব ভূ-স্তরে গিয়ে পড়বে। রাজশাহী নগরীর ওয়াসার পানি অপচয় রোধ করা খুবই জরুরি। কারণ রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতির রক্ষার জন্য সবার পানি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন