- সড়কের জায়গা দখল করে বাজার ও ভ্রাম্যমাণ দোকান
- উচ্ছেদের আদেশ থাকলেও কার্যকর হয়নি
- ম্যাজিস্ট্রেটের সংকটে অভিযান থমকে আছে
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তিনটি গরুর বাজারে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে হাজারো মানুষ। মহাসড়কের বড় একটি অংশ দখল করে এসব বাজার পরিচালিত হওয়ায় প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনা, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক চলাচল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নান্দাইল উপজেলার মুসুল্লি ইউনিয়নের মেরেঙ্গা গরুর বাজার, চ-ীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম চৌরাস্তা গরুর বাজার এবং কিশোরগঞ্জ-কেন্দুয়া সড়কের বাশাটি গরুর বাজার সড়কের ওপরই পরিচালিত হচ্ছে। এসব বাজার এবং গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ দোকান, যত্রতত্র যানবাহন পার্কিং ও হাট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ।
বিশেষ করে বারুইগ্রাম চৌরাস্তা বাজারের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করেই সেখানে গরুর হাট বসানো হচ্ছে। এই বাজারের ইজারা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। জনশ্রুতি রয়েছে, সর্বোচ্চ দরদাতা না হয়ে কৌশলে সর্বনি¤œ দরদাতাকে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
জনবহুল এলাকাগুলোতে সড়কের পাশ ঘেঁষে কিংবা সরাসরি সড়কের ওপরই গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার, ফলের দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা। এতে সড়কের মূল অংশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও পথচারীদের অসতর্ক চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে হাটবারে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার যানবাহন। চরম ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থী ও পথচারীরা।
এই সড়কে চলাচলকারী কয়েকজন বাস ও সিএনজি অটোচালক জানান, মহাসড়কের ওপর বাজার বসায় গাড়ি চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হঠাৎ মানুষ সামনে চলে আসে, গরু ওঠানামা করেÑ সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। তারা দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও কঠোর নজরদারির দাবি জানান।
যদিও এর আগেই অবৈধ স্থাপনাসহ গরুর বাজার উচ্ছেদের আদেশ জারি করা হয়েছে, তবে অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিনটি বাজারই নান্দাইল উপজেলায় অবস্থিত হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে কিশোরগঞ্জ সওজ এই অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছে।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা জান্নাত বলেন, মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র হাট-বাজার বসানো ও গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। মহাসড়ক আইনে এসব বাজার বা স্থাপনা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব বাজারের কারণে নিরাপদ মহাসড়ক গড়ার উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা থেকে বাজার উচ্ছেদের বিষয়টি মূলত তাদের দায়িত্ব। তিনি আরও জানান, সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, বারুইগ্রাম চৌরাস্তা বাজারে গরুর হাট উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগও দেওয়া হয়, তবে তিনি বদলি হওয়ায় অভিযান স্থগিত হয়ে পড়ে। পুনরায় ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া গেলে অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। অন্য দুটি বাজারের বিষয়েও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

