চট্টগ্রামে ৩ হাজারের বেশি কারখানার মধ্যে প্রায় ১২ শ ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে এলএনজি ঘাটতির কারণে দৈনিক প্রায় ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে।
এর প্রভাব পড়েছে স্টিল, সিমেন্ট, জাহাজ ভাঙা, ঢেউটিন ও তৈরি পোশাক শিল্পসহ গৃহস্থালি খাতে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ দৈনিক প্রায় ২৫০ থেকে ২৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট। যা চাহিদা (৩১২-৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) থেকে অনেক কম।
এলএনজি আমদানিতে ঘাটতি এবং সরবরাহে বিঘ্নই এ সংকটের মূল কারণ।
কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে শিল্প ও আবাসিক খাতে একই লাইনে গ্যাস সরবরাহ হওয়ায় সংকট সবখানেই অনুভূত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের ছয় লাখের বেশি গ্রাহক সংযোগে গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত।
প্রিমিয়ার সিমেন্টের এমডি আমিরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি কিনে উৎপাদন চালাতে হচ্ছে, এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।’
জিপিএইচ ইস্পাতের জিএম রিমন বড়ুয়া বলেন, গ্যাসচাপ কম থাকলে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। এতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে পড়ে।
পোশাক খাতেও গ্যাস সংকট প্রকট। বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, জরুরি শিপমেন্ট থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান দ্বিগুণ ব্যয়ে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করছে।
চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি নির্ভর করে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালগুলোর ওপর। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও আমদানি ঘাটতির কারণে টার্মিনালগুলো থেকে অনেক সময় দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ কমে আসে। বর্তমানে দুটি বেসরকারি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ হচ্ছে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এ সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক ১,১৫০ টন সার উৎপাদন এখন পুরোপুরি বন্ধ।
প্রতিষ্ঠানের হেড অব অপারেশন উত্তম চৌধুরী বলেন, গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আমরা উৎপাদন শুরু করতে পারছি না।
শিল্প মালিকরা বলছেন, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়ছে দেশ। দ্রুত এ সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে চট্টগ্রামের শিল্প ও অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।