মুরাদনগরে গণপিটুনিতে একই পরিবারের দুই নারীসহ তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয় জন। তবে আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। এর মধ্যেই আলোচনায় এসেছেন নিহত হওয়া রোকসানা আক্তার রুবী। তার চলে যাওয়ার পর এক এক করে বেরিয়ে আসছে সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেখতে শ্যামলা হলেও রুবী ছিলেন সুন্দরী, কোকরানো চুল, খুবই অহংকারী, উগ্রমেজাজি। ১৯৯৯ সালে বাড়িতে ছিল তার চৌচালা টিনের ঘর। ঘরের সামনে ছিল বিশাল খালি বাড়ি। এখন তার একটি ৭ তলা ভবন, একটি করে ৩ তলা ও দোতালা ভবন এবং দু’টি টিনের ঘর রয়েছে।
এ ছাড়াও রয়েছে একটি মার্কেট। বাড়ির সামনে ডিসি খালের ওপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় আরসিসি পিলারের ওপর রয়েছে কয়েকটি অবৈধ দোকানঘর। যা দখল করে রেখেছে রুবী ও তার পরিবার। ঘটনার পর থেকে সব দোকানে ঝুলছে তালা।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানায়, ক্ষমতার দাপট দেখাতে রুবী প্রথমে বিয়ে করেন চাচাতো ভাই কবির হোসেনকে। কবির তালাক দিলে রুবী কম বয়সী পীর কাশিমপুর গ্রামের মাদক কারবারি জুয়েলকে বিয়ে করেন।
তালাকের পর কবির চট্টগ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। তার ঘরে রয়েছে রুবীর ৩ মেয়ে ও এক ছেলে। আর জুয়েলের ঘরে একটি ছেলে রয়েছে। কবিরের বড় মেয়ে নরসিংদীতে বিয়ে করেছেন। সেখানেই সংসার করছেন তিনি। আর জুয়েলের একমাত্র সন্তানকে রুবী ভারতে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জুয়েলকে বিয়ে করার পর থেকে রুবী মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন। দেহ ব্যবসা, নারী শিশু নির্যাতন, ফেন্সিডিল, গাঁজা, ইয়াবা ব্যবসা মূল কর্ম হয়ে উঠে। গত ৩০ বছর ধরে তার ছিল একক অধিপত্য। তার বিরুদ্ধে কিছু বললেই হামলা, মামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হতো। রুবীর নাম মুখে নিতেই ভয় পেতো মানুষ। পীর কাশিমপুর, কড়ইবাড়ি, হীরাকাশি, হায়দরাবাদ গ্রামের মানুষের বিরুদ্ধে ৮২টি মামলা করেছেন তিনি।
এ ছাড়া সাবেক মুরাদনগর থানা ওসি ও মুরাদনগর-বি সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাও করেছিলেন রুবী। এমনকি বিভিন্ন তুচ্ছ ঘটনায় মামলা-হামলা শিকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। বিপক্ষে কথা বললেই রুবী চালাতেন নির্যাতন।
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রুবীর সেই তাণ্ডবের অবসান ঘটেছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
গত বৃহস্পতিবার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আকুবপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কড়ইবাড়ি গ্রামে গণপিটুনিতে তিনজনকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবী (৫৮), তার ছেলে মো. রাসেল (৩৫) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (৩২)। আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
এ ঘটনায় কড়ইবাড়ি গ্রাম ও বাজারে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিহতদের বাড়ি ও ওই এলাকা মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। নিহতের বাড়িতে ঝুলছে তালা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।