গাজীপুরে জায়ান্ট টেক্সটাইলস্ লিমিটেডে নারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কারখানা কর্মকর্তাদের অশালীন আচরণ ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, কারখানার প্রশাসন ব্যবস্থাপক সোহেল রানা এবং রক্ষণাবেক্ষণ শাখার সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) কাউছার শ্রমিকদের নির্যাতন করেছেন।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পরে কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারা অনুযায়ী কারখানার কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
নির্যাতিত নারী শ্রমিক এবং পিসি কমিটির সদস্য জুঁই আক্তার অভিযোগ করেছেন, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় তারা কারখানায় প্রবেশ করলে কয়েকজন কর্মকর্তা শ্রমিকদের ওপর অশালীন আচরণ শুরু করে। তারা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার চেষ্টা করলে ৩০-৪০ জন সহকারী কর্মী লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।
জুঁই আক্তার জানিয়েছেন, তার পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। পরে সোহেল রানা তাকে কারখানার বাইরে টেনে হুঁশিয়ারি দেন যে পুনরায় প্রবেশ করলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা হয়েছে।
পরবর্তীতে শনিবার বিকেলে শ্রমিকরা মেম্বারবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল এবং মহাসড়ক অবরোধ করে। বিক্ষোভে তারা অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং নির্যাতনের বিচার দাবি করেন। বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে জয়দেবপুর থানা পুলিশ এবং শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ আনে। তারা জানায়, শ্রমিকরা অযৌক্তিক দাবি এবং অতিরিক্ত ওভারটাইম নিয়ে কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।
কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক আনেয়ারুল হক রিপন বলেন, ‘আমাদের কারখানা শতভাগ কমপ্লায়েন্সে পরিচালিত হয়। কোনো শ্রমিককে কখনো গালিও দেওয়া হয়নি। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অযৌক্তিক দাবি এবং পরিস্থিতি তৈরির কারণে আমরা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছি।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক জালাল হাওলাদার বলেন, ‘মালিকপক্ষের লোকজন শ্রমিকদের মারধর ও নারী শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করেছে। শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবে তাদের অধিকারের জন্য প্রতিবাদ করেছে।’
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। সম্পত্তি ও জননিরাপত্তার স্বার্থে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীতে কারখানা খোলার তারিখ জানানো হবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে গাজীপুরের শ্রমিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশাসনের প্রতি দ্রুত তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন