২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪০০ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। এই হাসপাতালে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী আসেন। এ ছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের পর থেকে জনবল সংকটের কারণে আইসিইউ সেবাও বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালে সাধারণ মানের কিছু বেসিক টেস্ট করা হয়, কিন্তু সিটি স্ক্যান, এমআরআই, হরমোন টেস্ট, কালচার, হিস্টোপ্যাথলজি—এরকম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করা সম্ভব নয়, কারণ সরঞ্জাম নেই। এ ছাড়াও মেডিসিন ও সার্জারি পোস্টে কোনো কনসালট্যান্ট নেই। স্ট্যান্ডার্ড সেটাপে ১৭৮ জন চিকিৎসক প্রয়োজন, কিন্তু এখানে সর্বমোট চিকিৎসক রয়েছেন ৪৪ জন। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হাসপাতালের পাশে নির্মিত হলেও পুরোপুরি চালু হয়নি, যার কারণে জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ সবসময় বেশি থাকে। এ ছাড়াও দালালদের দৌরাত্ম্যে রোগী ও স্বজনরা হয়রানির শিকার হন।
১৯৭৪ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতাল পরবর্তীতে ১০০ এবং পরে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। ৪৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৫ জন প্রতিদিন বহির্বিভাগে, ৪ জন ইমারজেন্সিতে এবং বাকি ২৫ জন ইনডোরে ডিউটি করেন।
হাসপাতালে ১৪টি ওয়ার্ড রয়েছে: ১নং প্রসূতি, ২নং শিশু, ৩নং গাইনি, ৪নং মেডিসিন (মহিলা), ৫নং মেডিসিন (পুরুষ), ৬নং সার্জারি (পুরুষ), ৭নং সার্জারি (মহিলা), ৮নং অর্থো (পুরুষ), ৮এ অর্থো (মহিলা), ৯নং ডায়রিয়া, ১০নং ইএনটি, ১১নং সিসিইউ, ১২নং আইসিইউ, ১৩নং করোনা সাসপেকটেড, ১৪নং করোনা পজিটিভ। তবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আইসিইউ সেবা বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার ৪টি (গাইনী, সার্জারি, অর্থোপিডিক)। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ১৩ জন, আউটসোর্সিং ভিত্তিতে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন ৭৫ জন। হাসপাতালের খাবারের মান ভালো, তবে ২৫০ রোগীর বাইরে খাবার পরিবেশন সম্ভব নয়। ঔষধের বরাদ্দ রয়েছে, তবে অনেক রোগী ঔষধ না পাওয়ার অভিযোগও করেন।
গোপালপুরের রফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে ব্রেনের এমআরআই পরীক্ষা করতে বলেছিলেন। সদর হাসপাতালে এমআরআই নেই, তাই প্রাইভেট হাসপাতালে ৭,৫০০ টাকা খরচ করে পরীক্ষা করেছি। সরকারি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা থাকলে রোগীদের ভোগান্তি কমত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগীর স্বজন বলেন, ‘হাসপাতালের আশেপাশের ঔষধের দোকানদাররা রোগীর স্বজনদের হাত থেকে ঔষধের স্লিপ নিয়ে বেশি দাম চায়। প্রতিবাদ করলে দাপট দেখানো হয়।’
উপ-পরিচালক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, ‘প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও সহকারী স্টাফ না থাকায় রোগীরা পুরোপুরি সেবা পাচ্ছে না, তবে যারা আসেন তাদের উপযুক্ত সেবা দেওয়া হয়। ঔষধ ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, তবে রোগীর চাপ বেশি হলে বেগ পোহাতে হয়। আইসিইউ, ডাক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী বৃদ্ধি করলে আশানুরূপ সেবা সম্ভব হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন