খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি সংঘটিত সহিংসতায় পাহাড়িদের ৫৪টি দোকান, ২৬টি ঘরবাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এতে আনুমানিক ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)। সংগঠনটি জানায়, গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা ও আশপাশের এলাকায় এই সহিংসতা ঘটে।
রোববার (০৫ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে।
সংগঠনটির অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে: নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে স্থানীয় ও বহিরাগত বাঙালিদের দ্বারা পাহাড়ি নারী ও শিশুদের ওপর ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, হত্যার পর ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ২১টি ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৯ জন নারী ও শিশু মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন। অভিযোগ রয়েছে, এসব ঘটনার অধিকাংশেই কোনো সঠিক তদন্ত বা বিচার হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, খাগড়াছড়ি সদরে এক জুম্ম কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে ২৭ সেপ্টেম্বর উত্তেজনা তৈরি হয়। ওই দিন ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র সঙ্গে স্থানীয় বাঙালিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামসু বাজার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বাঙালি জনগোষ্ঠী ও বহিরাগতদের হামলায় জুম্ম বসতিতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত এবং ২০ জনের বেশি আহত হন।
পিসিজেএসএস দাবি করে, ধর্ষণের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ (প্রসিতপন্থি) পরিকল্পিতভাবে উসকানিমূলক ভূমিকা পালন করেছে। তারা অভিযোগ করে, ইউপিডিএফ-সমর্থিত ছাত্ররা আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী ইউপিডিএফপন্থি ব্লগার ও ব্যক্তিরা সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ায়।
তবে ইউপিডিএফ-এর মুখপাত্র অংগ্য মারমা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের বক্তব্য এবং পিসিজেএসএসের বক্তব্যে কোনো পার্থক্য নেই। তিনি উসকানির অভিযোগকে অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন এবং এসব অভিযোগের নিন্দা জানান।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনি আজ রোববার ভোর ৬টা থেকে পৌর এলাকা ও সদর উপজেলায় জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে। তবে গুইমারা উপজেলায় এখনো ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে এক আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। তবে পরে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা যায়, ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়নি।