সোমবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


চৈতন্য চ্যাটার্জী, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট)

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম

দুই পা অচল, তবুও থেমে নেই রহিমের স্বপ্ন

চৈতন্য চ্যাটার্জী, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট)

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০৭:৪৬ পিএম

প্রতিবন্ধী আব্দুর রহিম তার গাড়িতে করে কাজে যাচ্ছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

প্রতিবন্ধী আব্দুর রহিম তার গাড়িতে করে কাজে যাচ্ছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

এক অনন্য সাহস, অধ্যবসায় ও আত্মপ্রত্যয়ের জ্বলন্ত প্রদীপ শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. আব্দুর রহিম। জন্মগতভাবে সুস্থ্য থাকলেও দুর্ঘটনার কারণে দুই পা আজ সম্পূর্ণ অচল। নেই কোনো পৈত্রিক সম্পত্তি কিন্তু শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাকে জীবনের লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে দিতে পারেনি। বরং প্রতিদিনের সংগ্রামই তাকে আরও শক্তিশালী করে তুললেও এখন তিনি কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত।

৩৫ বছর বয়সি এই যুবকের শরীরের দুই পা নিস্তেজ হলেও মনোবল তার অদম্য। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু করেন কর্মদিবসের প্রস্তুতি। নিজের ওপর নির্ভর করে চলছে পুরো পরিবারের সংসার। দৃঢ় বিশ্বাস তাকে আরও অনুপ্রাণিত করে। চলাফেরার জন্য হুইলচেয়ার বা অন্যের সহায়তা নিতে হলেও তিনি কখনোই কর্মস্থলে দেরি করেন না। সময়মতো উপস্থিত হওয়াটা তার কাছে শুধু দায়িত্ব নয়, সম্মানেরও বিষয়। কিন্তু বর্তমান কিডনি সমস্যা থাকার কারণে ঠিকমতো কর্মস্থলে আসতে পারছেন না।  

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রহিমের বাবা মৃত ঘুতু মন্ডল ২০১২ সালে মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি সংসার জীবনে দায়িত্বভার কাঁধে নেন। নিজের কোনো পৈত্রিক সম্পত্তিও নেই। উপজেলার মহাশ্বসানের দক্ষিণপার্শ্বে স্বর্গীয় মহল্লালের ছেলে প্রদীপ কুমার আগরওয়াল তাকে ৪ শতক জায়গা নোটারি করে ভারত গেছেন। সেখানে তার মা, স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক ছেলে নিয়ে রহিমের বসবাস। এর আগে একবার চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ার ভেলুরে নিউরোলজি ডাক্তারের চিকিৎসা করিয়েছেন। ইনতেফা কোম্পানির মালিক আবু দাউদ ইব্রাহিম ডিআই কাজীর আর্থিক সহায়তায় বেশ কিছু মাস সুস্থ ছিলেন রহিম। 

২০০৫-২০১৫ সাল পর্যন্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে অস্থায়ীভাবে চাকরি করতেন রহিম। দু’পা অচল হওয়ায় গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করলেও এখন কিডনি সমস্যায় ভুগছেন মাথাভর্তি সংসারের চিন্তা নিয়ে। বগুড়া পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কিডনি স্পেশালিস্ট ডা. আহসান হাবিবের পারামর্শে আছেন; সেখানে প্রতি মাসে ঔষধ ছাড়া ডাক্তার ভিজিট ও রিপোর্ট বাবদ গুনতে হয় ৬ হাজার টাকা।

উপজেলার সামনে হোচিমিন পাইলট প্রিন্টিং হাউজে বসেই তিনি করে থাকেন ব্যানার, পোস্টার, লোগো, বিজনেস কার্ডসহ বিভিন্ন ডিজাইনের কাজ। আধুনিক সফটওয়্যারে দক্ষতা, সৃজনশীল চিন্তা ও নির্ভুল কাজে তিনি স্থানীয়ভাবে ইতোমধ্যেই পরিচিত একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। গ্রাহকদের সঙ্গে তার আচরণ, সময়মতো কাজ সরবরাহ এবং কাজের মান—সবকিছুর সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন সবার আস্থার জায়গা।

আব্দুর রহিম বলেন, ‘দুই পা অচল হয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করা হামার জন্য সহজ আছল না। তবুও ভাগ্যবান হামি, কারণ হামার কর্মস্থলে হোচিমিন ভাই ও পাইলট ভাইয়ের মতো মানুষ আছিল। তারা শুধু হামাক বেতনই দেন না, বরং নানা সময় নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়াছে।’

তার ভাষ্য, দুই পা অচল হয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করা তার জন্য সহজ ছিল না। তবুও ভাগ্যবান তিনি, কারণ তার কর্মস্থলে হোচিমিন ও পাইলটের  মতো মানুষ  ছিলেন। তারা শুধু তাকে বেতনই দেন না, বরং নানা সময় নানাভাবে আর্থিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ফ্রিল্যান্সিং করছেন মো. আব্দুর রহিম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রহিম আরও জানান, তার শারীরিক অবস্থার কারণে স্বাভাবিকভাবে বাথরুমে যাওয়া সম্ভব হতো না। অনেক সময় দোকানেই প্রস্রাব-পায়খানা করতেন, শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে হঠাৎই অপ্রীতিকর অবস্থায় পোশাক নষ্ট হয়ে যায় তার। কিন্তু কখনোই দোকানিরা তাকে ছোট করে দেখেননি, বিরক্তও হননি বা অবমূল্যায়ন করেননি। বরং অত্যন্ত মানবিকভাবে বিষয়গুলো বুঝে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভাবতে অবাক লাগে, তাদের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো তাকে চাকরিই দিতেন না, কিংবা এই বিশেষ সুবিধাগুলো দেওয়া আরও কঠিন হতো। কিন্তু তারা রহিমের সীমাবদ্ধতাকে দুর্বলতা না ভেবে, মন দিয়ে বোঝেন এবং সবসময় তাকে সম্মান করেন।

দোকান মালিক পাইলট বলেন, ‘রহিম শুধু আমার কর্মী নয়, পরিবারের একজন সদস্য। অসুস্থতার মধ্যেও সে দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করে, এটা আমাদের সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। আমরা সবসময় তাকে সম্মান করি ও পাশে থাকার চেষ্টা করি। বৃত্তবান মানুষরা যদি একটু সহযোগিতা করে, রহিমের মতো হাজারো রহিম আরও সাবলম্বী হয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।’

প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা জানান, বাবার সম্পত্তি নেই, দুর্ঘটনায় দু’পা হারিয়েছেন, এখন কিডনি সমস্যা। সহায়তা পেলে তিনি সুস্থ হয়ে বড় পরিসরে কাজ করতে পারবেন এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানেও ভূমিকা রাখতে পারবেন।

উপজেলার সমাজসেবা অফিসার মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘রহিমের সংগ্রাম ও প্রতিভা সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষ ইচ্ছা করলে কী না করতে পারে—বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। দুই পা অচল হয়েও নিজের সাহস, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি শুধু নিজের পরিবারের হালই ধরেননি, বরং সমাজের হাজারো প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য হয়ে উঠেছেন অদম্য অনুপ্রেরণা। 

Link copied!