চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মশার লার্ভার ঘনত্ব দ্বিগুণ হয়ে গেছে, যা নগরবাসীর জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া- এই দুই মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের প্রাদুর্ভাবে চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গুর চেয়েও বেশি তীব্র রূপ নিচ্ছে। সরকারি জরিপ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে চট্টগ্রাম দ্রুত ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকটে পড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি চট্টগ্রামকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে উল্লেখ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে নগরীতে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) দাঁড়িয়েছে ৭৫.২৯%, যেখানে ২০২৪ সালে তা ছিল ৩৬%।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী, ব্রুটো ইনডেক্স ২০ শতাংশের বেশি হলে সেই এলাকা মশাবাহিত রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ১৩৪%, যা আগের বছরের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এডিস মশার লার্ভা এখন ঘরোয়া পরিবেশেও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৪ সালে ২০০টি বাড়ির মধ্যে ৭৪টিতে (৩৭%) লার্ভা পাওয়া গেলেও এ বছর ১২৮টি বাড়ির মধ্যে ৬২টিতে (৪৮%) লার্ভার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘আইইডিসিআরের গবেষণা অনুযায়ী আমরা সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠিয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুস সাত্তার বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি। আবার অনেক রোগীর শরীরে একসঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণও পাওয়া যাচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭৯৩ জন ডেঙ্গু এবং ৭৬৪ জন চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত আটজনের, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন জুলাই মাসে। এ ছাড়া তিনজনের জিকা ভাইরাসও শনাক্ত হয়েছে।
এডিস মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে আইইডিসিআর জরিপে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে হটস্পট ধরে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালানো হচ্ছে। নতুন জরিপ অনুযায়ী এলাকাগুলোতে ফগিং এবং লার্ভিসাইড ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোই এই সংকট মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি। প্রতিটি নাগরিককে নিজের বাসা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং জমে থাকা পানি অপসারণে সচেষ্ট হতে হবে।

 
                            -20250728044128.jpg) 
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251030233957.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন