বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মিজানুর রহমান মিজান, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছেন টেকনাফের জেলেরা

মিজানুর রহমান মিজান, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

টেকনাফের নাফ নদীর ঘাড়ে জেলেদের ট্রলার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

টেকনাফের নাফ নদীর ঘাড়ে জেলেদের ট্রলার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

একের পর এক ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মিরা। তাদের দৌরাত্ম ক্রমেই বাড়ছে। এতে আতঙ্কে কক্সবাজারের টেকনাফের জেলেরা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে নাফ নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা। ফলে জেলেদের জীবন-জীবিকায় পড়েছে ভাটা। অনেকেই পড়েছেন দুর্দশায়। 

গতকাল বুধবারও ৫ জন জেলেসহ ট্রলার নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এর আগে মঙ্গলবারও ৬ জন জেলেকে নিয়ে গেছে তারা।  সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফা নৌকাসহ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে জেলে পরিবারগুলো।

তথ্যমতে, গত এক সাপ্তাহে চার মেয়াদে ৪০ জন জেলেকে নৌকাসহ ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এদের মধ‍্যে ৭ জন রোহিঙ্গা জেলে রয়েছে—তারা কেউ এখনও ফেরত আসেননি।

উখিয়া-টেকনাফের দুই উপজেলার লক্ষাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকা চলে নাফ নদীতে মাছ শিকার করে। কিন্তু, আরাকান আর্মির দৌরাত্মে দিশেহারা তারা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন। অপহরণের ভয়ে সাগরে যেতে চান না অনেকে।

জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের খোঁজ নেওয়া হবে এবং ব‍্যবস্থা নেওয়া হবে।’

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘জেলেরা যাতে কোনোভাবেই জলসীমা অতিক্রম না করেন সে ব‍্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

টেকনাফের শাহ্পরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়া, মিস্ত্রি পাড়া, পশ্বিম পাড়া, সাবরাং মুন্ডার ডেইল, বাহারছড়া, টেকনাফ সদরের তুলাতুলি, লম্বরী বিল ঘাট ও বাহার ছড়া ইউপির কয়েকটি ঘাটসহ টেকনাফ পৌর এলাকার খায়ুকখালী নৌঘাট ঘুরে দেখা যায়।

আরাকান আর্মির ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে না পাঠিয়ে ট্রলারগুলো অলস বসিয়ে রেখেছেন ট্রলার মালিকরা।

এদিকে, প্রশাসনের দাবি জেলেরা নাফ নদী ও সাগরের জলসীমানা অতিক্রম করাও আরাকান আর্মি কতৃক তাদের জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ বটে।

এ বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপ ছোট নৌকাঘাটের সভাপতি আব্দুল গফুর বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে গেলেই জেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে  আরাকান আর্মি। তাদের ভয়ে জেলেরা সাগরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।’

‘তাদের (আরাকান আর্মি) দমন করতে না পারলে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হবেন। বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে আমরা এসব বিষয় অবগত করেছি; কিন্তু টেকসই কোনো সমাধান পাচ্ছি না’, যোগ করেন তিনি।

গফুর আরও জানান, দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আরাকান আর্মির আনাগোনা রয়েছে সাগরে ও নাফ নদীতে। কোস্ট গার্ড ও বিজিবি টহল থাকলেও তাদের নেই সাগরে চলাচল উপযোগী দ্রুতগামী নৌযানসহ প্রয়োজনীয় জনবল।

এদিকে, আরাকান আর্মির কবজায় থাকা জেলে পরিবারের মধ্যে চলছে কান্নার আহাজারি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অধিকাংশ জেলে সাগর ও নাফ নদীতে নামতে পারেননি, বর্তমান সময়ে রাখাইনে যুদ্ধ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গেলেই নদীর জ্বলসীমা লঙ্ঘনের অজুহাতে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের অপহরণের ঘটনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদী সীমান্ত ঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের জেলেদের মাঝে ভয় কাজ করছে। অনেকে অপহরণের ভয়ে নাফ নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না।

আরাকান আর্মি কতৃক অপহরণের পর মিয়ানমারের জেল থেকে ফেরা সাবরাং ইউপির জেলে হামিদ বলি জানান, ‘নাফ নদী খোলে দেওয়ার পর আমরা মনে করেছিলাম সে আগের মতো মাছ শিকার করে সংসার চালাতে পারব, কিন্তু এখন দেখছি নাফ নদী বন্ধ ছিল ভালোই ছিল। কারণ নদী খোলে দিলে কী হবে, তার সাথে নদী নির্ভর জেলেদের জীবনের নিরাপত্তার ব‍্যবস্থাও সরকারের করে দেওয়ার দরকার ছিল।’

সাবরাং মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মুন্ডার ডেইল ন‍ৌঘাটের সভাপতি শহিদুল্লাহ জানান, ‘৫৮ দিন সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল জেলেরা। কিন্তু বিধি বাম—সাগরে নেমে পার্শ্ববর্তী স্থান মাছ না পেলে বাধ‍্য হয়ে একটু দুরে গিয়ে জাল ফেলতে হয়, ঠিক তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। আরাকান আর্মি দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমরা এই বিষয়টির সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

টেকনাফ কায়ুকখালীয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়া বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরতে যেতে বাধা দিচ্ছে আরাকান আর্মি। ট্রলারে লুটপাট করা হচ্ছ। তাই টেকনাফের চার শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এরই মধ্যে অনেক সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। বিজিবির প্রচেষ্টায় গত ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফায় মিয়ানমার থেকে ১৮৯ জন জেলেকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। প্রথমবারের মতো ২৭টি নৌযান ফেরত এনে মালিকদের হস্তান্তর করা হয়। নতুন করে যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের খোঁজ নেওয়া হবে এবং ব‍্যবস্থা নেওয়া হবে।’

টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সাগরে বাংলাদেশি জেলেদের মাছ ধরায় বাধা দেওয়া ও নৌযান নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নৌযান মালিকদের মাধ্যমে জেনেছি। কোস্টগার্ডের সদস্যরা এসব এলাকায় সবসময় সতর্ক রয়েছেন। জেলেরা যাতে কোনোভাবেই জলসীমা অতিক্রম না করেন সে ব‍্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

এদিকে আরাকান আর্মির বাধার মুখে টেকনাফ স্থল বন্দরের ব‍্যবসা বানিজ‍্যও বন্ধ রয়েছে। আরাকান আর্মির বিচরণ রোধে দুই দেশের সংশ্লিষ্টদের আলোচনার মাধ‍্যমে সমাধান করা খুবই জরুরি মনে করছেন সচেতন মহল।
 

Link copied!