হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বাতাসে এখন আমন ধানের ঘ্রাণ। কৃষকের মুখে হাসি। ইতোমধ্যে হাওরে ধান কাটা শুরু হয়ে শেষের পথে। দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ফলে কৃষকদের ভরসা এখন হারভেস্টার মেশিন। অগ্রহায়ণ মাসেই এ ধান উঠবে কৃষকের গোলায়।
হেমন্তের আগমনে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব চলছে। উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক-কৃষাণীর চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছে। ধানে ধানে ভরে গেছে মাঠ। যতদূর চোখ যায়- সোনালি ধানের শীষ। চারদিকে মৌ মৌ গন্ধ। এখন কৃষাণ-কৃষাণীরা গোলা, খলা, আঙিনায় ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত।
নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আগাম জাতের কিছু কিছু ধান পাকলেও ১০/২৫ দিনের মধ্যে আমন ধান পুরোদমে কাটা-মাড়াই শেষ হবে। আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় আশায় বুক বাঁধছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে হাটবাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে ধানের দামও ভালো। তা ছাড়া আগাম ধান কাটার পর আবার একই জমিতে সরিষা চাষ করতে পারবেন কৃষকরা।
সিলেট অঞ্চলে আশ্বিন-কার্তিক অভাবের মাস। এ সময় কৃষকের ঘরে খাবার থাকে না। শ্রমিকের থাকেন কর্মহীন। হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। নবীগঞ্জের হাওরাঞ্চলের আশ্বিন-কার্তিক মাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বিআর-৩৩ নামে স্বল্পমেয়াদি জাত আবিষ্কার করে। এর জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন, যেখানে অন্যান্য জাতের জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন। এছাড়া কৃষকরা এই আমন মৌসুমে স্বল্পমেয়াদি হাইব্রিড ধানের চাষ করছেন। অনেকে একে বলেন অভাবের সময়ের ধান। নবীগঞ্জের কৃষকরা এখন সচেতন। আগাম আমন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো কিংবা ভুট্টা, ডালসহ নানা শস্যবিন্যাসকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা এখন অনেক অগ্রগামী।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড আমন ধান লাগানো হয়েছে। শুধু বিআর-৩৩ লাগানো হয়েছে ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে, হাইব্রিড লাগানো হয়েছে ৫০০ হেক্টরে, বিনা-৭ লাগানো হয়েছে ৩০০ হেক্টরে। তাছাড়া রয়েছে বিআর-৩৯ ও ৪০ জাতের আগাম ধান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফজলুল হক মনি জানান, কৃষকদের মাঝে আগাম ফসল উৎপাদনে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা এখন অল্প খরচে বেশি লাভ করতে চান। তাছাড়া আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফসল উঠলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এছাড়া এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফলন হয়েছে।


