ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

আলুর বাজারে ধস, মাথায় হাত কৃষক-ব্যবসায়ীদের

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০১:১০ পিএম
হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ীরা। ছবি- সংগৃহীত

আলুর বাজারদর আশানুরূপ না থাকায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। উৎপাদন ও সংরক্ষণ খরচসহ প্রতি ৬০ কেজির বস্তায় খরচ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা, অথচ বর্তমানে ওই বস্তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭০০-৮০০ টাকায়। এতে প্রতিটি বস্তায় গড়ে ৬০০ টাকারও বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কৃষকদের দাবি, বাজারে দাম না থাকায় তারা হিমাগারে সংরক্ষিত আলু তুলছেন না। ফলে মজুতও কমছে না। যেখানে গত বছর এ সময়ে ৪০ শতাংশ আলু বিক্রি হয়েছিল, এবার তা নেমে এসেছে ২০ শতাংশেরও নিচে। এতে ক্ষতির পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হিমাগার মালিকরাও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৭,৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার টন। এর মধ্যে ৭৮ হাজার টন আলু সংরক্ষিত রয়েছে ৯টি হিমাগারে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই দাম পড়ে যায়, ফলে কৃষক-ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ লাভের মুখ দেখেননি।

কালীগঞ্জের কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, ‘লাভের আশায় হিমাগারে ৭০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। এখন পর্যন্ত বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ২৮ হাজার টাকা, অথচ মৌসুমে বিক্রি করলে ৬০ হাজার টাকা পাওয়া যেত।’

কমলাবাড়ী এলাকার কৃষক ফারুক হোসেন জানান, ‘হিমাগারে ৫০ বস্তা আলু রেখেছি, কিন্তু বাজারে দাম না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না। বিক্রি করলে প্রায় ২০ হাজার টাকা লোকসান হবে।’

ব্যবসায়ীরাও বলছেন, দাম বাড়লে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে নামে, অথচ এখন দাম পড়ে গেলেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে পাইকারি বাজারে চাহিদা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে লোকসানে বিক্রি করছেন।

হিমাগার মালিকরা জানান, এ বছর কৃষক-ব্যবসায়ীরা আলু তুলতে না আসায় মজুত পড়ে আছে। গত বছর আগস্টের মধ্যে ৫০-৬০ হাজার বস্তা আলু বের হলেও এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০-১৫ হাজার বস্তায়। নভেম্বরের মধ্যে হিমাগার খালি হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইখুল আরেফিন বলেন, ‘বাজারে দাম না থাকায় হিমাগারে আলু রয়ে যাচ্ছে। এতে বাজার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’