নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুয়েল সাংমা লাঠি দিয়ে এক শিশুকে পেটানোর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ঘটনা ঘটেছিল আরও পাঁচ মাস আগে। এ ঘটনায় গত রোববার আদালতে মামলাও দায়ের হয়েছে।
তবে বাদী ওই শিশুর কোনো আত্মীয় নন, মামলাটি দায়ের করেছেন অন্য একজন। ভুক্তভোগী শিশু (১৭) উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মারধরের অভিযোগে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান কবির গত রোববার নেত্রকোনার আটপাড়া আমলি আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৪ মার্চ ঈদুল ফিতরের আগে বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদে ২ হাজার ৩৭ জন উপকারভোগীকে ১০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। লাইনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ইউএনও ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের কাছ থেকে লাঠি নিয়ে শিশুটিকে পেটান।
বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান জানান, মারধরের ভিডিও মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদী রায়হান কবির বলেন, ‘আমি সে দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। ইউএনও পুলিশ নিয়ে এসে শিশুটিকে লাঠি দিয়ে মারেন। আমরা থামানোর চেষ্টা করলেও তিনি থামেননি। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন আচরণ শোভন নয়।’
ভুক্তভোগী শিশু জানায়, আমি চাল নিতে গিয়ে ভিড়ের কারণে বাঁশের বেড়া ভেঙে পড়েছিল। তখন ইউএনও এসে আমাকে মারধর করেন এবং বিকেল পর্যন্ত আটকে রাখেন। পরে আমার চাচি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৪ মার্চ ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় কার আগে কে চাল নেবে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ইউএনও রুয়েল সাংমা ঘটনাস্থলে যান। ওই শিশু তাকে ধাক্কা দেয়। পরিস্থিতি সামলাতে ইউএনও লাঠি ব্যবহার করেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চাল বিতরণ পুনরায় শুরু হয়।
ধাক্কা দেওয়ার কারণে ইউএনও শিশুটিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দিতে চেয়েছিলেন। তবে শিশুর আত্মীয়রা ক্ষমা চাওয়ায় তিনি তাকে মাফ করেন। শিশুটিও নিজের ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দেয়।
ইউএনও রুয়েল সাংমা বলেন, ‘ওখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। কয়েকজন চাল লুটের চেষ্টা করছিল, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি মার্চ মাসের। ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম হয়েছিল। ইউএনও সেখানে গিয়ে কিছু ছেলে চাল লুট করতে দেখেন। অবশ্যই লাঠি ব্যবহার ঠিক হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, ছেলেটি ক্ষমা চেয়েছে। মার্চেই বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারত। পরে এই মামলার মাধ্যমে বিষয়টি সামনে এসেছে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও অন্যায় করেছেন, কিন্তু চাল বিতরণে অনিয়মও ঘটেছিল।’