ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে শেখ মুজিবের ছবি, প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ১০:০৩ এএম
বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর ঘটনায় শামিমা ইয়াছমিন নামে এক প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পিরোজপুরের নেছারাবাদে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর ঘটনায় শামিমা ইয়াছমিন নামে এক প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রাথমিক তদন্ত শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার জসিম আহমেদ।   

শামিমা উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের সোনারঘোপ রমেশ চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

জানা গেছে, রোববার (৩ আগস্ট) বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আপত্তি জানান। তারা প্রধান শিক্ষককে ছবিটি নামাতে বলেন। প্রধান শিক্ষক তখন তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং জানান, ‘আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমরা বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধা করি। সরকারি নির্দেশনা ছাড়া আমি ছবিটি নামাতে পারব না।’

পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং সামাজিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর একাধিক সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রধান শিক্ষককে ছবিটি নামানোর মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি সেটি পালন করে ছবিটি বিদ্যালয়ের চিলেকোঠায় রেখে দেন।

সোমবার শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তারা সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেন। তদন্তে শেখ মুজিবের ছবিটি অফিসকক্ষে থাকার প্রমাণ মেলায় শামিমা ইয়াছমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক বিদ্যালয় থেকেই বঙ্গবন্ধু ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি, বই ও অন্যান্য সামগ্রী সরানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো লিখিত নির্দেশনা নেই।’

ক্লাস্টার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এতদিন বিষয়টি নজরে আনেননি কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সাতজনের জায়গায় মাত্র দুজন। এটিরও দায়িত্ব পালন করছি। একার পক্ষে ৯০টি স্কুল দেখা সম্ভব নয়। সোনারঘোপ বিদ্যালয় দুর্গম এলাকায়, বর্ষাকালে যাতায়াত কঠিন।’

প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াছমিন বলেন, ‘আমি ২০২০ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর ছবিটি তখন থেকেই ছিল। সরকারি কোনো চিঠি বা প্রজ্ঞাপন না পেয়ে আমি সরানোর পক্ষপাতী ছিলাম না।’

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কেউ বলছেন, বরখাস্তের সিদ্ধান্ত স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ, কেউ আবার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া সমর্থন করেছেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে তদন্ত কার্যক্রম চলমান। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।