ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

‘নিউজ করেন, ৫ বছর ধরে আছি বদলি হয় না’—পরদিনই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ১১:০৯ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

‘আমার নামে নিউজ করেন, আমি পাঁচ বছর হলো বরগুনায় আছি—যেতে চাই, কিন্তু যেতে পারছি না। এই পাঁচ বছরে বরগুনায় থেকে অনেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছি, কিন্তু বরগুনা ছাড়তে পারলাম না।’ মজার ছলে সহকর্মীদের সঙ্গে এমন মন্তব্য করেছিলেন বরগুনার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরের দিনই তিনি সেই বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এতে ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা।

জানা গেছে, বরগুনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে জেলা শিক্ষা অফিসের প্রশিক্ষণ কক্ষের পাশে পরিবারসহ বসবাস করছেন। সম্প্রতি সাংবাদিকরা বিষয়টি যাচাই করতে গেলে তারা অফিসের তৃতীয় তলায় একাধিক কক্ষ তার ব্যক্তিগত ব্যবহারাধীন দেখতে পান। এর মধ্যে একটি গেস্ট রুমে তিনি নিজে থাকেন এবং বাকি দুটি কক্ষ দিয়েছেন সহকারী পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম ও অসিত বাবুকে।

সরকারি অফিসে বসবাসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সামান্য বেতন পাই, তাই এখানেই থাকি। এত বড় অফিস পাহারা দিতে লোকও দরকার।’ তিনি আরও দাবি করেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতিতেই তিনি অফিসে থাকছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রবাসীর স্ত্রী লাভলী আক্তার নিপার সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। পরে ২০২২ সালের ২৫ জুন ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়। লাভলীর দাবি, বিয়ের সময় জসিম উদ্দিন নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। বিষয়টি প্রথম স্ত্রী মমতাজ বেগম জানতে পারলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরে পারিবারিক চাপে জসিম উদ্দিন লাভলীকে তালাক দেন।

তবে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল স্থানীয়দের উপস্থিতিতে তিনি পুনরায় লাভলী আক্তার নিপাকে ৯১ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। মাঝে মাঝে তিনি অফিসের দখলকৃত গেস্ট রুমে স্ত্রী নিপাকে নিয়ে থাকতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে প্রথম স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে ২ অক্টোবর স্বামীকে নিয়ে লাভলীর বাসায় গিয়ে হুমকি প্রদান করেন। এতে লাভলী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে খোরপোষ দাবিতে জেলা জজ আদালতে মামলা করেন।

ঘটনার পর সাংবাদিকরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে ছবি তোলেন ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জসিম উদ্দিন ৩০ অক্টোবর চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈশাখ টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি রাসেল শিকদার, এ ওয়ান টিভির প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন রাজুসহ অজ্ঞাত আরও দুইজনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বরগুনা সদর থানার ওসিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে ২ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে বরগুনা থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসাইন মামলাটি এজাহার হিসেবে দ্রুত বিচার আইনে রুজু করেন।

এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ)। সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর, জেলা সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর কবির মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান তাপস এক যৌথ বিবৃতিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, তিনি বর্তমানে অফিসের বাইরে আছেন এবং পরে কথা বলবেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “বরগুনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে থাকার অনুমতি আছে কিনা, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম—আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো।”