ভারত কর্তৃক স্থলবন্দর দিয়ে পাটপণ্যের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলেও এতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বিশেষ কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে প্রয়োজনীয় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। রপ্তানি ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বিঘ্ন এড়াতে সরকার সচেষ্ট এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পাটপণ্য রপ্তানি গতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত হবে না বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয় (ডিজিএফটি) থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটপণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাট ও পাটজাতীয় পণ্যের কাপড়, পাটের দড়ি বা রশি, পাটজাতীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি দড়ি বা রশি এবং পাটের বস্তা বা ব্যাগ স্থলবন্দর দিয়ে আর আমদানি করা যাবে না। এসব পণ্য আমদানি করতে হলে ভারতের মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে দেশটির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া মেলেনি।’
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং এতে ইতিবাচক ফল পাওয়ার ব্যাপারে সরকার আশাবাদী।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও পরিস্থিতি এতটা অস্থিতিশীল নয় যে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ কারণে কোনো সমস্যা হবে না।’
গত কয়েক মাসে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর একাধিক অশুল্ক বাধা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয় এবং কোমল পানীয় আমদানিতে বিধিনিষেধ। তার আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশের পণ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়।
সম্প্রতি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর বাংলাদেশও স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে। এর আগে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়েও সিদ্ধান্তের কথা জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ানো ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবার শুধু ভারত থেকেই নয়, যেখান থেকে কম দামে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
মূল লক্ষ্য হলো বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দাম কমানো। বর্তমানে ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্রুত বাড়ছে গত এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি দাম ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় পৌঁছেছে। যদিও আমদানি শুরু করার তারিখ ও পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টার পাশাপাশি বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।