আজ সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে অল্প সময়েই নগরীর বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। এর সঙ্গে যোগ হয় রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান অবরোধ কর্মসূচি।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারে (২২ মে) একদিকে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে আন্দোলন; এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী।
বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজধানীর শাহবাগ, গুলিস্তান, কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, ফকিরাপুল, নিউমার্কেট, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক পানিতে ডুবে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন, তবে হাঁটার পথেও ছিল জলাবদ্ধতা। কোথাও কোথাও পানি জমে যাওয়ায় রিকশা ও মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় সড়কের মাঝখানে।

এদিকে, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো আজ সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে কাকরাইল ও মৎস্য ভবন মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সকাল ১০টায় নগর ভবন ঘেরাওয়ের জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিছিলের কারণে গুলিস্তান এলাকায় যানজট দেখা দেয়।
একই সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে মিছিল নিয়ে সদরঘাট থেকে আসতে থাকায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার বিচার ও দায়ীদের গ্রেপ্তার দাবিতে শাহবাগ মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রদল। এই অবরোধে পুরো শাহবাগ এলাকার ট্রাফিক কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
চোখে পড়ার মতো দুর্ভোগের চিত্র উঠে আসে সাধারণ মানুষের কণ্ঠে।
৬০ ফিট এলাকা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে সকাল ৯টায় পল্টনের উদ্দেশ্যে বের হওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন চার ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন চলবে? ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থেকে অফিসে যাওয়া আমাদের জন্য নিপীড়নের মতো হয়ে গেছে।’
একইভাবে ভোগান্তির কথা জানান মুগদা থেকে সেগুনবাগিচা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগা আল আমিন।
ব্যবসায়ী জামিউল আহসান বলেন, ‘নিউ মার্কেট থেকে শ্যামলী যাওয়ার পথে পানির কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশা থেমে যায়। বাস যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল নদীর স্রোতের মতো পানি বইছে।’
রমনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিম তামিম বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হাঁটারও উপায় ছিল না। পানির কারণে জুতা খুলে, প্যান্ট গুটিয়ে চলতে হয়েছে।’
মালিবাগের বাসিন্দা আব্দুল হাকিমের অভিযোগ, ‘বর্ষা এলেই আমাদের কষ্ট শুরু হয়। সামান্য বৃষ্টিতে অলিগলি ডুবে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না বদলালে এই সমস্যা থেকেই যাবে।’
ট্রাফিক পরিস্থিতি নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, ‘অবরোধ ও বৃষ্টির কারণে অনেক সড়ক ডুবে গেছে ও বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ট্রাফিক পুলিশও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
বিকেল পর্যন্ত শহরের সার্বিক চিত্র অপরিবর্তিত ছিল। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ফার্মগেট, জাহাঙ্গীর গেট এলাকাতেও যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অফিস শেষে বাসায় ফেরার সময়েও রাজধানীবাসীকে পোহাতে হয় দীর্ঘ ভোগান্তি।
সব মিলিয়ে আজকের দিনটি যেন ছিল রাজধানীর নাগরিকদের জন্য এক অঘোষিত ‘রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ’। দুই ফ্রন্টে একযোগে নাকাল ঢাকা শহর।
আপনার মতামত লিখুন :