মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১২:৪৫ এএম

জমে উঠছে ঈদবাজার

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১২:৪৫ এএম

জমে উঠছে ঈদবাজার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পুরোদস্তুর কেনাকাটা জমে উঠেছে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ভিড়ের সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে ক্রেতাদের চাহিদার তালিকা। রাজধানী ঢাকা, চায়ের রাজধানী সিলেট ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন পুরোদমে ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও চট্টগ্রাম ব্যুরোর পাঠানো প্রতিবেদন-

রাজধানী ঢাকার অভিজাত ও উচ্চবিত্তদের ঈদের শপিংয়ের তালিকার অন্যতম জায়গা কুড়িল এলাকার যমুনা ফিউচার পার্ক। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সুবিশাল এই শপিং মলে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারছেন বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা। 

এবার দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেশি রাত করে কেনাকাটায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ক্রেতারা। ফলে গতবারের মতো মধ্যরাতে কেনাকাটার চাপ কমেছে। 

যমুনার আর্টিসন শপিংমলের বিক্রেতা নোমান শরীফ কাওসার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই শপিংমলে অভিজাত, ধনী ও সব শ্রেণির মানুষের পছন্দানুযায়ী দেশি-বিদেশি সব ব্র্যান্ডের কাপড়, রেডিমেট পোশাক রয়েছে। সুবিশাল পরিসরে একই ছাদের নিচে রয়েছে প্রায় সব ধরনের নামিদামি ব্র্যান্ড। যে কারণে রমজানের প্রথম থেকেই যমুনায় ক্রেতাদের যে চাপ ছিল, দিনে নে তা আর বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শপিংমলের ভেতর ও বাইরের আলোকসজ্জা ক্রেতাদের নজর কাড়ছে দূর থেকেই। রাজধানীর যানজট, শব্দদূষণ, ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি, গরমের ঝামেলা নেই যমুনায়। এক ছাদের নিচে সাজানো রয়েছে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সব রকমের পোশাক, গয়না, কসমেটিকস, ক্রোকারিজ, জুতা, পারফিউমসহ সব ধরনের পণ্য। 

বিক্রেতারা বলছেন, রোজা শুরুর পর থেকেই যমুনা ফিউচার পার্কে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে ছুটির দিনগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকছে বেশি। শপিংমলের বিশাল পরিসরে হাজার হাজার মানুষ অনায়াসে কেনাকাটা করতে পারেন। 

এক শোরুম থেকে আরেক শোরুম ঘুরে কিনছেন পছন্দের পোশাক। বিকালে শপিংমলের প্রবেশমুখেই দেখা যায় ক্রেতাদের গাড়ির লম্বা সারি। ইফতারের আগে রাজধানীর যানজটের কারণে বন্ধ হয়ে থাকে প্রায় সব রাস্তা। সন্ধ্যায় অনেকে শপিংমলের ফুডকোর্টে ইফতার সেরে আবার কেনাকাটা শুরু করেন।

ইজি শোরুমের ম্যানেজার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ইফতারের পর রীতিমতো মানুষের ঢল নামছে যমুনা ফিউচার পার্কে। অনেক রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। সকাল থেকে ক্রেতা থাকলেও সন্ধ্যার পর তা আরও জমজমাট হচ্ছে। 

যমুনা ফিউচার পার্কে রয়েছে- মেট্রো ফ্যাশন, দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড হুর, ইনফিনিটি, কে ক্রাফট, অঞ্জনস, আড়ং, টুয়েলভ, রেড, জেন্টল পার্ক, টিন’স ক্লাব, প্লাস পয়েন্ট, কান্ট্রি বয়, রেঞ্জ, সিক্স লাইফ স্টাইল, লা রিভ, আর্টিসানসহ বিভিন্ন পোশাকের ব্র্যান্ড। যেসব আউটলেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকছে। 

প্লাস পয়েন্টের বিক্রেতারা বলেন, রমজানের প্রথম থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। সময় যত যাবে, ততই কেনাকাটা বাড়বে বলে আশা করছি। রমজানের প্রথম ধাপের কেনাকাটা শেষ হয়েছে, এখন মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ পর্যন্ত আর জমে উঠতে শুরু করেছে। 

অফিস ও সরকারি ছুটির সঙ্গে ভিড় বাড়তেই থাকবে। অনেকে পরিবারের জন্য ঈদের শপিং করে গ্রামের বাড়ি চলে যান। যারা শহরে থাকেন, তারা কয়েক ধাপে কেনাকাটা করেন। যমুনা ফিউচার পার্কে আড়ংয়ের আউটলেটে গিয়ে দেখা যায় অনেক মানুষের সমাগম। ছেলেদের ঈদের প্রধান আকর্ষণ পাঞ্জাবি। আড়ংয়ের সুতি, সিল্ক মিলিয়ে বাহারি সব পাঞ্জাবি এসেছে। আছে শিশুদের বাহারি সব পোশাকও।

কে ক্রাফটের শোরুমে দেখা যায় সাদা, কালো, লাল, নীল, সবুজ নানা রঙের পাঞ্জাবি। সুতি, ভয়েল, ব্র্যান্ডের কটনের পাঞ্জাবি, যার দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে হাফ সিল্ক, অরতানজা ও সুতির। ইনফিনিটির আউটলেটে গুলশান থেকে আসা সুমন কবির বলেন, যমুনা ফিউচার পার্ক আমার পছন্দের  শপিংমল। এখানে সব ব্র্যান্ডের জিনিস মেলে।

জানা যায়, এবারের ঈদ ঘিরে প্রতিষ্ঠান দুটি ইন্দো-ওয়েস্টার্ন, কাশ্মীরিসহ ১৫-২০ ধরনের কালেকশন এনেছে। নতুন ডিজাইন ও উন্নতমানের পোশাক পেয়ে খুশি ক্রেতারা। গুলশান-১ থেকে আসা আহমেদ বলেন, যমুনা ফিউচার পার্ক শাপিংয়ের জন্য আমাদের পছন্দের স্থান। সাধারণত, ঈদে এখান থেকে কেনাকাটা না করলে হয় না। এবারও ছেলেকে নিয়ে এসেছি। 

এবার যমুনা ফিউচার পার্কে ঈদ কেনাকাটায় আকর্ষণীয় ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছে। ঈদ ঘিরে যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করে কোটি টাকার উপহার জেতার সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা। এই অফারের আওতায় শপিংমলের যেকোনো শোরুম থেকে সর্বনম্নি ২ হাজার টাকার কেনাকাটা করলেই সুযোগ থাকবে টিভি, ফ্রিজ, ইলেকট্রনিকস ও ইলেকট্রিক পণ্যসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় উপহার জেতার সুযোগ। এই ক্যাম্পেইন চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। 

যমুনা শপিংমলের সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শপিংমলটির জেনারেল ম্যানেজার (মল অপারেশন) নূর-ই সাইফুল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এবার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছি। এখানে ২৫০ জন নিরাপত্তাকর্মী সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। 

তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে আমাদের ১০ জনের বিশেষ টিম রয়েছে। প্রায় ১২০০ সিসি ক্যামেরা রয়েছে পুরো শপিংমলে। একই সঙ্গে, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ যেকোনো ঘটনা রোধ করতে আমাদের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।

সিলেটের ঈদবাজার: সিলেট মহানগরীতে জমে উঠছে ঈদবাজার। নগরীর শুকরিয়া মার্কেট, আল হামরা, ব্লু ওয়াটারসহ সব মার্কেট ও শপিংমলে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত অধিকাংশ দোকান। কেউ নতুন জামা-কাপড় কেনায় ব্যস্ত, আবার কেউ বা এখনো পরখ করছেন। নারীরা কসমেটিকসের দোকানে ভিড় করছেন। কারও হাতেই যেন সময় নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ক্রেতারা বলছেন, এবারের ঈদে জামা-কাপড়, জুতা, কসমেটিকসহ সব জিনিসের দাম অনেক বেশি। গতবারের তুলনায় এবারের ঈদের বাজারে কোনো কোনো পণ্যে ১৫ থেকে ২৫ পার্সেন্ট দাম বেশি রাখা হচ্ছে। কিছু কিছু দোকানে জামা-কাপড়ের দাম সহনীয় বলে জানান ক্রেতারা। তবে অনেক ক্ষেত্রে জমা-কাপড়ের কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম বেশি রাখা হচ্ছে।

নগরীর শুকরিয়া মার্কেটে ঈদের বাজার করতে এসেছেন আফসানা জান্নাত মিম। জামা-কাপড় আর কসমেটিকসের শপিং ব্যাগ নিয়ে মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে ঈদের বাজার নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, পরিবারের বড় সদস্য আমি। বাবা নেই। মা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। 

তাই ভাইবোনদের জন্য ঈদের বাজার করতে এসেছি। এবারে ঈদ বাজারে বাজেটের চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি। তবে না কিনে তো উপায় নেই। ছোট ভাইবোনদের জন্য ঈদে কিছু না কিছু কিনতে হয়। 

গতবার ঈদে বোনের জন্য যে ধরনের জামা ১ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম, এবার প্রায় সেইম কাপড়ের ভিন্ন ডিজাইনের কাপড়ের দাম পড়ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা। জুতার দোকানের অবস্থা আরও খারাপ। ব্র্যান্ডের জুতার দাম ফিক্সড করা থাকে, দামাদামির কোনো সুযোগ নেই। 

তুলনামূলক দাম বেশি লিখে ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছে। যে জুতা গতবার কিনেছি ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে, সেই জুতা এবার ২ হাজার ১০০ টাকার ওপরে। সবকিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুবই হিমশিম খাচ্ছি। 

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী হাসান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. আজিজুল করিম বলেন, এখনো পুরোপুরি ঈদের বাজার জমে ওঠেনি। তবে ক্রেতাসমাগম বেড়েছে। বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় দাম বেড়েছে। তাই গতবারের চেয়ে একটু দাম বেশি। তবে দোকান খরচ, লোকজনের বেতন-ভাতা দিয়ে ব্যবসায়ীদের তেমন একটা লাভ হয় না। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাস শেষে তেমন একটা প্রফিট থাকছে না।

তার মতে, যখন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হবে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও বাড়বে। প্রবাসীরা দেশে যত বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবে, তত আমাদের দেশের অর্থনীতি চাঙা হবে। 

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীরা সব সময়ই ক্রেতাবান্ধব। তারা আগে ক্রেতার সুবিধা-অসুবিধায় লক্ষ রাখেন। কেউই অতিরিক্ত মুনাফালোভী নন। 

মাঝেমধ্যে কেউ যদি পণ্যের দাম বেশি রাখেন আর আমরা তার খবর পাই, তাহলে তাকে সাবধান করি। এতে তিনি সংশোধন না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুপারিশ করি। আমরা চাই না ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কেউই ক্ষতিগ্রস্ত হোক। এবারের ঈদের বাজারে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে আশা করছি।

নগরীর কুমারপাড়ায় বাবার সঙ্গে প্রথম ঈদের বাজার করতে এসে আলোঝলমল দোকান আর রাস্তাঘাট দেখে বেজায় খুশি আহসান সাদিক। আনন্দের অনুভূতি ব্যক্ত করে আহসান সাদিক জানায়, ‘এবার প্রথম ঈদের বাজার করতে এসেছি। অনেক আনন্দ লাগছে। 

দোকানগুলো অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শার্ট-টিশার্ট ও প্যান্টগুলোর ডিজাইন অনেক সুন্দর। জুতাগুলোতে আছে বাহারি ডিজাইন। কোনটা রেখে কোনটা কিনি তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। বাবার সঙ্গে বাজারে এসে অনেক ভালো লাগছে।’

সিলেট মহানগরীর নয়াসড়ক এলাকায় অবস্থিত চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশনের ম্যানেজার কবির খান বলেন, ক্রেতাদের সমগাম বেড়েছে। বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তবে ভারতীয় কাপড় না থাকায় টাকার অঙ্ক কম হচ্ছে। জামা-কাপড়ের কাঁচামালের দাম বাড়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। 

তাই এর প্রভাব এবারের ঈদের বাজারে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, টিশার্ট, ফতোয়া ও মেয়েদের রেডি থিপিস, টুপিস, শাড়ি, কসমেটিকসহ সব ধরনের জামা-কাপড় আমাদের প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। প্রকারভেদে বিভিন্ন দামের জামা-কাপড় রয়েছে। 

সিলেট নগরীর ফ্যাশন-সচেতন তরুণীদের অন্যতম পছন্দের ‘মাহা’ ফ্যাশন হাউজে ঈদের বাজার করতে এসেছেন আদিবা জান্নাত। তিনি বলেন, প্রতি ঈদের কেনাকাটা ‘মাহা’ ফ্যাশন হাউজে করি। মাহার যে কালেকশন আছে, তা সিলেটের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। মাহার ড্রেস, শাড়ি মানে ও ডিজাইনে অনন্য।

মাহার ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদির সাইদুল জানান, প্রতিটি উৎসবেই আমাদের বেচাকেনা ভালো হয়। ক্রেতারা মাহায় কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শাড়ির মধ্যে কাতান, বেনারসি বেশি চলছে। 

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার মহাসচিব ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাজার তত জমে উঠছে। এবারের ঈদের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তার পরও সবাইকে সাবধান থেকে বেচাকেনা করতে হবে, যাতে করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদ সামনে রেখে মহানগরীর প্রতিটি মার্কেট, শপিং মল, রাস্তাঘাটে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মার্কেট, শপিংমলে সাদা পোশাকে পুলিশ রয়েছে। নগরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে ঈদের বাজার ও ঈদ উপভোগ করতে পারে, তার জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। আশা করি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। 

চট্টগ্রামে ঈদ শপিং: ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসনের অব্যাহত অভিযান এবং মাঠ পর্যায়ের তদারকি নিশ্চিত করার কারণে বিগত কয়েক বছর থেকে চলতি বছর রোজাতে নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলক কম বলে মনে করেন চট্টগ্রামে কর্মরত সংবাদকর্মীসহ পেশাজীবীরা। আমদানিনির্ভর দুই-একটা পণ্য ছাড়া দেশীয় পণ্যের বাজারদর আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তুলনামূলক কম। বিগত বছরগুলোর তুলনায় নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের চিত্রেও রয়েছে স্বস্তির সুবাতাস। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোজার কয়েকদিন আগে থেকে নগরীতে যে পরিমাণ যানজটের চিত্র চোখে পড়েছিল এবারের রোজায় সে চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। যানজট নিয়ন্ত্রণের নাগরীবাসীর স্বস্তির নেপথ্যের কারণ হিসেবে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। 

তবে নিরাপদ সড়ক চাই চট্টগ্রাম মহনগরের সভাপতি আবু তৈয়ব বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় নগরীর যানজটের অবস্থা খুব বেশি ভালো তা বলা যাবে না। তবে আগের চেয়ে ভালো। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রোজার আগে থেকেই সরব ছিলো প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার। বাজারদর শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে মাঠে ছিলেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। 

চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক, রাইজিং বিডি চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান রেজাউল করিম ১৮ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, আজ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম ঘন্টাখানিকের জন্য। যেতে যেতে পথের দুই ধারে গ্রামীণ হাটগুলো দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, সদ্য ক্ষেত থেকে তুলে আনা নানা সবজির সমারোহ। 

চট্টগ্রাম জেল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ১৯৩টি অভিযান পরিচালনা করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৬৮১ জনকে। চলতি মাসের ১৭ দিনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অর্থদণ্ডের পরিমাণ ২৭ লাখ ১১ হাজার ৬০০ টাকা। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। তিনি বলেন, রোজার আগে থেকেই মাসব্যাপী পরিকল্পনা নিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। যা এখনো চলমান রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনি ক্ষমতা ও সুযোগ থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক কিছুই করা যায় না। 

রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বারবার বসেছি। তাদের পরামর্শ যেমন নিয়েছি ঠিক তেমনি আমরাও কিছু পরামর্শ দিয়েছি। সবার সম্মেলিত প্রচেষ্টায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে।

জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, তেলসহ আমদানিনির্ভর দুই-একটা পণ্যের দাম বাড়লেও দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বিগত বছরের তুলনায় কমেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। 

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও মোড়গুলোতে জানজট নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হলেও ১৯ মার্চ দুপুরে নগরীর জিইসি মোড় এলাকা ছিল আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ফাঁকা। 

চট্টগ্রাম শহরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে শুরু করে বহদ্দার হাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেইট, জিইসির মোড়, লালখান বাজার, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ,  নিউমার্কেট, ইপিজেড, বন্দরটিলা, সিমেন্ট ক্রসিং, কাটগড়, ভাটিয়ারি, কর্নেল হাট, একে খান, নয়া বাজার, বড়পোল, ওয়াসা, চকবাজার, লালদীঘি, খুলশি, প্রবর্ত্তক মোড়গুলোতে যানজটের কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন পথচারীরা। 

জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজার ব্যবসায়ী সাজ্জাদ উদ্দিন জানান, গত বছর এই সময়টাতে গাড়ি নিয়ে সড়কে ঘন্টারপর ঘন্টা বসে থাকতে হতো। এবার চিত্র ভিন্ন। রোজায় যে পরিমাণে জ্যাম থাকার কথা এবার তা নাই বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। 

গতবারের রোজার চেয়ে এই রোজায় যানজট কমেছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) লিয়াকত আলী খান। তিনি বলেন, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সচেতনতার বিকল্প নাই।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!