বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

ত্রিমুখী চাপে রাকসুর আকাশে ‘কালো মেঘের ঘনঘটা’

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ইউনিট। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ইউনিট। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে রাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচন কমিশন গঠনের সাড়ে ৩ মাস পরে নানান পক্ষের চাপে ঘোষণা করা হয় নির্বাচনের তফসিল। ঘোষণা করা তফসিল পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে ইতোমধ্যে দুইবার।

নির্বাচনী কার্যক্রম এগোতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পিএসসিতে নিয়োগ, ছাত্রদলের ‘সদিচ্ছার অভাব’, পোষ্যকোটা নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোনয়নপত্র বিতরণের দিনগুলোতে দিনব্যাপী ধর্মঘটসহ নানান কারণে রাকসুর আকাশে ‘কালো মেঘের’ ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে।

ছাত্রনেতারা বলছেন, রাকসু নিয়ে প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার পরিবর্তন হচ্ছে। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বিতরণ হয়নি। এখন আবার রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকছেন না। ফলে সবমিলিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এই পরিবর্তনের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দুই বার পুনর্বিন্যস্ত হলো তফসিল

শিক্ষার্থী, ছাত্র রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর চাপে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রায় সাড়ে ৩ মাস পরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ২৮ জুলাই। ঘোষিত তফসিলে ১৫ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনের তারিখ অপরিবর্তিত রেখেই গত ১৩ আগস্ট তফসিল প্রথমবার পুনর্বিন্যাস করা হয়।

এতে ২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র বিতরণ করার কথা ছিল। তবে মনোনয়নপত্র বিতরণের আগের দিন রাত সাড়ে ১১টার পরে মনোনয়নপত্র বিতরণ স্থগিত করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকেলে নির্বাচনী তারিখ ঠিক রেখে আরেক ধাপে তফসিল পুনর্বিন্যাস করা হয়। সবশেষ তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ২৭ থেকে ২৮ আগস্ট; ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ২ সেপ্টেম্বর। পরে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। সবশেষ ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

শিক্ষকদের কর্মসূচি

পোষ্যকোটা পুনর্বহালের দাবিতে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে চতুর্থ দিন কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ২০ আগস্টের মনোনয়নপত্র বিতরণ পেছাতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন। তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে আজ আবার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।

কর্মসূচিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষক-কর্মকর্তারা হলেন: বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমীরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জামায়াতে ইসলামী আমির ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাখা জামায়াত সেক্রেটারি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান, অফিসার সমিতির জামায়াতপন্থি কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা এবং বিএনপিপন্থি অফিসার সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ঘোষণা করা কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে, ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণের দিন হলেও ওই তিন দিন তারা দিনব্যাপী ধর্মঘট পালন করবেন। তারা ২১ আগস্ট জনসংযোগ করেছেন। আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত প্রশাসন তাদের দাবি মানতে সময় বেঁধে দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি দাবি মানা না হয়, ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তারা দিনব্যাপী ধর্মঘট চালাবেন।

এতে প্রশ্ন উঠেছে—শিক্ষকদের এই কর্মসূচি কি শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য, নাকি রাকসু নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে।

তবে তাদের কর্মসূচির সঙ্গে রাকসুর কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছেন অধ্যাপক আব্দুল আলিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে রাকসুর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের অধিকারের যৌক্তিক সমাধান চাই।’

যৌক্তিক সময় নাকি নির্বাচন পেছাতে চায় ছাত্রদল?

শাখা ছাত্রদলের নেতাদের দাবি, রাকসু নিয়ে ছাত্রদলের দাবিগুলো প্রশাসন আমলে নেয়নি। শিবির ছাড়া নীতিগত ভূমিকায় কেউ নেই। আমরা চাই প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে তাদের আস্থা অর্জন করুক। ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের যৌক্তিক দাবি মেনে প্রশাসন নির্বাচন করুক। তড়িঘড়ি করে নির্বাচন নয়। না হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রহসনমূলক নির্বাচন মেনে নেবে না।

একাধিক সূত্র বলছে, কিছুদিন আগেও শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের রাকসু নিয়ে আগ্রহ ছিল না। তবে তাদের দলীয় উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তবে সাংগঠনিক গতিশীলতা এবং যোগ্য প্রার্থী না থাকায় তারা দোটানায় রয়েছে।

শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, তবে তা তড়িঘড়ি নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হওয়ার পর। এতে আমরা নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন চাই।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পিএসসিতে পদায়ন

মনোনয়নপত্র বিতরণের মাত্র তিন দিন আগে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। গতকাল বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সাংবিধানিক এই পদে নিয়োগের ফলে তিনি আলোচনার মাধ্যমে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। নির্বাচনী সময় আকস্মিক এই বদলিতে সংশয় প্রকাশ করেছেন ক্যাম্পাসের ছাত্রনেতারা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি আলোচনা মাধ্যমে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। উপাচার্য দ্রুতই নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিবেন।‘

ছাত্র নেতাদের বক্তব্য

মনোনয়নপত্র বিতরণের কয়েক দিন আগে ক্যাম্পাসের সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, ঠিক তখনই এমন ঘটনা ঘটেছে। এটি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত ও বানচাল করার একটি কৌশল হতে পারে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে দখলদারিত্বের সংস্কৃতি বিদ্যমান। যাদের দখল করার সুযোগ আছে, তারা দখল করার চেষ্টা করছে। আর যারা আধিপত্যবাদী শক্তি কিন্তু সুযোগ নেই, তারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে এই ষড়যন্ত্র সম্ভব হচ্ছে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার যদি এখন রদবদল হয়, তবে তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন হবে কি না প্রশ্ন থেকেই যায়। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তারা প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বিতরণ হয়নি। এখন আবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার নেই। ফলে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি নোমান ইমতিয়াজ বলেন, ‘ত্রিমুখী এই চাপ রাকসু বানচালের পরিকল্পিত চেষ্টা। রাজনৈতিক দলের নেতারা শিক্ষকদের সামনে আন্দোলন করাচ্ছেন। এতে রাকসুর আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে।’

শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘সংকট সমাধান করতে হবে প্রশাসনের। আমাদের নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় এটি একটি দলের প্রভাব হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’

শিক্ষকদের বক্তব্য

অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রদবদলে নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। মনোনয়নপত্রও ২৪ আগস্ট থেকে বিতরণ শুরু হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ প্রতিষ্ঠান সুন্দরভাবে পরিচালনা করা। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি। আমরা রাকসু নিয়ে কমিটমেন্ট দিয়েছি এবং সেটি সুন্দরভাবে করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পিএসসিতে নিয়োগ হওয়ায় রাকসুর কাজে কোনো প্রভাব হবে না। আমরা যথাসময়ে রাকসুর কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব।’

Link copied!