রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম

ডাকসু কী, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারও ঢাকাবাসী, শিক্ষার্থী এবং গোটা দেশের নজর পড়েছে ঢাকার টাওয়ার ঘিরে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর, অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত এই নির্বাচন। এক সময়কার তৎপর ছাত্র রাজনীতি বর্তমানে কিছুটা থমকে থাকলেও এবার নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ডাকসু নির্বাচন তাই হয়ে উঠেছে গণতন্ত্র চর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।

ডাকসু কী ও কেন গুরুত্বপূর্ণ

ডাকসু বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি সংগঠন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালে, প্রাথমিকভাবে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ নামে। পরে, ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে বর্তমান নাম ধারণ করে।

ডাকসুর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নেতৃত্ব তৈরি এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ- প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে ডাকসু রেখেছে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা।

ডাকসুর ইতিহাস ও ঐতিহ্য

ডাকসুর ইতিহাস মানেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি- এই সবকিছুতেই ডাকসু নেতৃত্ব দিয়েছে শিক্ষার্থীদের।

ডাকসুর মঞ্চ থেকেই উঠে এসেছেন বহু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা- মওদুদ আহমদ, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আমানউল্লাহ আমান, নুরুল হক নুর- এরা সবাই ডাকসুতে নেতৃত্ব দিয়ে পরে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ভোটার কারা, কে প্রার্থী হতে পারে

ডাকসু নির্বাচনে ভোটার হতে পারবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা, যারা স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত এবং আবাসিক হলের সঙ্গে সংযুক্ত।

এবারের নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে- ৩০ বছরের বয়সসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে, ফলে তুলনামূলক বয়সে বড় শিক্ষার্থীরাও এবার ভোট দিতে পারবেন।

প্রার্থী হওয়ার জন্য, প্রথমে ভোটার হতে হবে। এরপর নির্ধারিত ফরমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় একাডেমিক কাগজপত্র, পরিচয়পত্র সংযুক্ত করতে হয়। যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন।

ডাকসুর কাঠামো ও পদের সংখ্যা

ডাকসু গঠিত হয় ২৮টি কেন্দ্রীয় পদ নিয়ে। উপাচার্য পদাধিকারবলে সভাপতি হলেও বাকি পদগুলোয় নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে-

সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), এছাড়াও ২৫টি অন্যান্য সম্পাদকীয় পদ।

এছাড়াও প্রতিটি আবাসিক হলে থাকে হল সংসদ, যেখানে ১৩টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার মোট ৪১টি পদে ভোট হবে- ২৮টি কেন্দ্রীয় সংসদে এবং ১৩টি হলে।

নতুন চারটি নতুন পদ

এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চারটি নতুন পদ যুক্ত করা হয়েছে, এগুলো হলো- গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক।

এই পদগুলো যোগ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আরও বহুমাত্রিক চাহিদা পূরণে ডাকসুর ভূমিকা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডাকসুর মূল কার্যক্রম ও দায়িত্ব

ডাকসুর কার্যাবলি শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ নয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর মূল কাজগুলো হলো- কমনরুম পরিচালনা ও ইনডোর গেমস, পত্রিকা সরবরাহ, বার্ষিক জার্নাল ও ম্যাগাজিন প্রকাশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, নাটক, বক্তৃতা আয়োজন, শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম, গবেষণা ও শিক্ষাবিষয়ক দাবিসমূহ উপস্থাপন।

এসব কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশ, নেতৃত্ব গঠন এবং অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এবারের নির্বাচনে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে হবে কিউআর কোড স্ক্যান করে, যা রেজিস্ট্রেশনের সময় শিক্ষার্থীর তথ্য অনুযায়ী তৈরি হয়েছে।

ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত- যা আগের তুলনায় এক ঘণ্টা বেশি। ভোট হবে ৮টি কেন্দ্রে, এর মধ্যে ছাত্রীদের জন্য ৪টি এবং ছাত্রদের জন্য ৪টি।

৫০৮টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে মোতায়েন থাকবে বিশেষ বাহিনী ও পর্যবেক্ষক দল। বুথ স্থাপন করা হয়েছে টিএসসি, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলসহ নির্ধারিত ভবনগুলোতে।

বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ

ডাকসু নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। নির্বাচন অনিয়মিত হওয়া, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সহিংসতা এবং দলীয় স্বার্থের প্রাধান্য শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অনেক সময় ছাপিয়ে গেছে।

২০১৯ সালের নির্বাচনে যেমন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, তেমনই দীর্ঘ ২৭ বছর ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণে এর প্রতি আস্থা অনেকের ভেঙে পড়েছিল। তবে এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Link copied!