বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণে আহত ৫১ শিক্ষার্থীকে সম্মাননা প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তনখোলা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। তবে, এই তালিকা ঘিরে শুরু হয়েছে নানা অভিযোগ ও অসন্তোষ।
আহত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দাবি করেছেন, প্রকৃত আহতদের অনেকেই সম্মাননা তালিকায় স্থান পাননি। তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যথাযথ তথ্য যাচাই হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। কিন্তু ‘জুলাই সম্মাননায়’ এদের মধ্যে অন্তত ৮ জনের নাম বাদ পড়েছে। একইভাবে, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই আহত আরও অনেকের নামও সম্মাননায় স্থান পায়নি।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল বলেন, ‘সাবেক উপাচার্যের সময় আমি তালিকায় নাম দিতে আবেদন জমা দিই। কিন্তু এবার প্রকাশিত তালিকায় আমার নাম নেই। কীভাবে এমন হলো, বুঝতে পারছি না।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক বলেন, ‘আমার শরীরে এখনো ৬০-৬৫টি ছররা গুলি রয়েছে। আমি আবেদন করেছিলাম, হয়তো তা গ্রহণ করা হয়নি।’
একই অভিযোগ করেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সজিব, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সুজন মাহমুদ এবং বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইমদাদুল হক। তারা জানান, দুইবার রেজিস্ট্রার অফিসে তথ্য জমা দিয়েছি। এরপরও নাম এল না, এমনকি কেউ যোগাযোগও করেনি।
আহত ও মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ বলেন, ‘আমি কোনো সরকারি জায়গায় আবেদন করিনি, হয়তো সেজন্যই তালিকায় নাম নেই। তবে যেহেতু এটি সম্মাননার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিলো যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত আহতদের তালিকা তৈরি করা।’
তালিকা প্রস্তুতসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে সম্মাননা প্রদান কমিটির আহ্বায়ক ড. ফেরদৌসী জামান তনু বলেন, ‘আমি কেবল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি, তালিকা প্রস্তুত বা আবেদন যাচাইয়ের দায়িত্ব আমার নয়। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, ‘প্রথমে ৪৪ জন, পরে ৬ জন, অতঃপর ১ জনসহ মোট ৫১ জন আবেদন জমা দেয়। যাচাই-বাছাই কমিটি আবেদন যাচাই করে তালিকা তৈরি করেছে। কারো নাম বাদ পড়ে থাকলে প্রমাণসহ আবেদন করলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।’
সমালোচিত এই অনুষ্ঠানে জুলাই সম্মাননার ক্রেস্ট বিতরণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী জামান তনু।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার (অ.দা.) অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দিন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. হাফিজ আশরাফুল হক এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান আবু জিহাদ।