দীর্ঘ ৩৪ বছরের অচলায়তন কাটিয়ে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে রাকসু, হল সংসদ এবং সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোটগ্রহণ করা হবে।
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে তফসিল বিবরণী পাঠ করেন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এনামুল হক।
তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা, শিক্ষার পরিবেশকে সমুন্নত রাখা এবং আরও সুসংহত করা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার্থে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে এই নির্বাচন ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাকসু নির্বাচন কমিশনার এই মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করছে।’
এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত তফসিল বিবরণী পাঠ করেন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এনামুল হক। তিনি বলেন, আগামী ৩১ জুলাই আচরণবিধি প্রকাশ, ৬ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৭ এবং ১০ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ভোটার তালিকায় আপত্তিগ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৪ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘১৭ থেকে ১৯ জুলাই মনোয়নপত্র বিতরণ, ২১, ২৪ এবং ২৫ আগস্টে মনোনয়নপত্র দাখিল, ২৭ এবং ২৮ আগস্ট মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। ৩১ আগস্ট প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ২ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। সবশেষে ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনি দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, নির্বাচনে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে ছাত্র রাজনৈতিক ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেছি।
এ ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেই আমরা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছি। নির্বাচন সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় সাংবাদিকসহ সকল অংশীজনদের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনারা পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা আপনাদের পর্যবেক্ষণকে মূল্যায়ন করে নির্বাচন আয়োজন করতে যেকোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। জুলাই অভ্যুত্থানপরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রাকসু নির্বাচনের দাবি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে, সে পথনকশা অনুযায়ী কাজ এগোয়নি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থী এবং ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ নির্বাচন কমিশনার রাকসু'র তফসিল ঘোষণা করে।
আপনার মতামত লিখুন :