ঢাকা সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডাকসুতে কাল বাছাই হবে পছন্দের প্রার্থী

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:১৫ এএম
ছবি- সংগৃহীত

পাঁচ বছর পর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। মোটামুটি সৌহার্দ্য–সম্প্রীতিমূলক পরিবেশে টানা ১৩ দিনে প্রার্থীরা তাঁদের প্রচারণার কাজ শেষ করেছে। আগামীকাল উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যালটের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদে পছন্দের প্রার্থী বাছাই করবে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। নির্বাচন স্বচ্ছ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ।

ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন শিক্ষার্থী।

ডাকসু নির্বাচনে জিতলে শিক্ষার্থীদের জন্য কী কী করবে, তা ইশতেহার আকারে প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও স্বতন্ত্র প্যানেলগুলো। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিরাও আলাদাভাবে ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। এসব ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম–গেস্টরুম সংস্কৃতির স্থায়ী অবসানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য ও পরিবহন সমস্যার সমাধান, রেজিস্ট্রার ভবনে ভোগান্তির অবসানের জন্য ডিজিটালাইজেশন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের মানোন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল শপথ পাঠের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ। তাদের প্যানেল ১০ দফা ইশতেহার প্রকাশ করেছে। এর প্রথম দফায় শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক, আনন্দময় ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দমন-পীড়নের মতো ঘৃণিত চর্চা বন্ধ করে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ছাত্রদল। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে কাজ করার কথাও বলেছে তারা।

শিবিরের প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট ৩৬ দফা ইশতেহার দিয়েছে। তাদের প্রথম দফা হলো ডাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা। তাদের দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি—ক্যাম্পাসকে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করা। শিক্ষার্থীদের বৈধ সিট এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করার কথাও বলেছে তারা।

আট দফার নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা এবং ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে প্রথম অগ্রাধিকারে রেখেছে তারা। এ ছাড়া আবাসিক হলে গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি চিরতরে মুছে ফেলার অঙ্গীকার করেছে তারা। নারীদের জন্য বিশেষ সাইবার নিরাপত্তা সেল গঠন ও আইনি সহায়তা দেওয়া, ‘ওয়ান কার্ড অল সার্ভিস’-এর মাধ্যমে পাঠাগারসুবিধা, স্বাস্থ্য ও পরিবহনসেবাসহ বেশকিছু বিষয় তাদের ইশতেহারে রয়েছে।

১১ দফা ইশতেহার দিয়েছে উমামা ফাতেমার ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। শতভাগ আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যায্য বেতনে পার্টটাইম (খণ্ডকালীন) চাকরির সুযোগ তৈরি করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানোসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই প্যানেল।

বামপন্থি সাত সংগঠনের প্রতিরোধ পর্ষদ ১৮ দফা ইশতেহার দিয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণায় অগ্রাধিকার, সব হলে সন্ত্রাস-দখলদারি বন্ধ করা, নারীবান্ধব ক্যাম্পাস, হলগুলোতে ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্যান্টিনের পরিবর্তে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ক্যাফেটেরিয়া চালু করার কথা বলেছে তারা।

ভোটের দ্বারপ্রান্তে এসে এখন নানা সমীকরণ মেলাচ্ছেন প্রার্থীরা। এবার ডাকসুতে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাঁচটি হলেই আছেন ১৮ হাজার ৯৫৯ জন। অর্থাৎ, মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫৪ শতাংশই নারী। বাকি ১৩টি ছাত্র হলে রয়েছেন মোট ২০ হাজার ৯১৬ জন ভোটার। ছাত্রদের হলগুলোর মধ্যে অমর একুশে হলে ১ হাজার ৩০০, বিজয় একাত্তর হলে ২ হাজার ৪৩, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লা হলে ২ হাজার ৫, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১ হাজার ৭৭২, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৪০৭, জগন্নাথ হলে ২ হাজার ২২৫, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১ হাজার ৬০৯, কবি জসীমউদ্‌দীন হলে ১ হাজার ২৯৮, জিয়াউর রহমান হলে ১ হাজার ৭৫৩, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬৬৫, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১ হাজার ৯৬৩, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৩৮১ ও সূর্যসেন হলে ১ হাজার ৪৯৫ জন ভোটার রয়েছেন। ছাত্রীদের হলগুলোর মধ্যে রোকেয়া হলে ৫ হাজার ৬৬৫, শামসুন নাহার হলে ৪ হাজার ৯৬, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২ হাজার ১১০, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪ হাজার ৪৪৩ ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে ২ হাজার ৬৪৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন।