আবাসন সংকট নিরসনসহ ৮ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (আইআইইউসি) আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কুমিরা ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বারবার প্রশাসনকে বিষয়গুলো জানালেও কার্যকর পদক্ষেপ না পেয়ে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবিগুলো মেনে না নিলে তারা অবরোধ, ঘেরাও ও পরিবহন ধর্মঘটসহ আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে।
শিক্ষার্থীদের ১৫ দফা দাবিসমূহ:
১) লেট ফি বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। তবে প্রি-রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা কবে বাস্তবায়িত হবে তার নির্দিষ্ট তারিখ প্রকাশ করতে হবে।
২) নবাগত শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া অঙ্গীকারকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এই সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান রেখে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না—এই মর্মে লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে।
৩) প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে প্রয়োজনীয় সকল ল্যাব স্থাপনের ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে—
ক. প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে যেসব ল্যাবের বাজেট অনুমোদিত হয়েছে, সেই বাজেট কত তারিখে অনুমোদিত হয়েছে এবং কবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব তার সুনির্দিষ্ট তারিখ লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
খ. যেসব ল্যাবের বাজেট অনুমোদিত হয়নি কিন্তু ডিপার্টমেন্ট গুলো রিকুইজিশন দিয়েছে, তার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তা বাস্তবায়ন করতে কত দিন সময় লাগবে, তারিখসহ লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
গ. যেসব ল্যাবের রিকুইজিশন ডিপার্টমেন্ট গুলো দেয়নি কিন্তু ডিগ্রির জন্য সেই সকল ল্যাব এর প্রয়োজন, তার পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে হবে। এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে কতদিন সময় লাগবে তার আনুমানিক তারিখও প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে উল্লিখিত তারিখের মধ্যে কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবে—এই মর্মে লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে।
ঘ. ডিপার্টমেন্টভিত্তিক শ্রেণিকক্ষ সংকটের পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে হবে এবং সংকট সমাধানের জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের সমাধান করতে কতদিন সময় লাগবে তাও লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
৪) আবু বকর (রা.) হলে যেসব ডিপার্টমেন্টের ক্লাস চলছে, তারা নিজস্ব ভবনে কবে নাগাদ ফিরতে পারবে তার নির্দিষ্ট তারিখ প্রকাশ করতে হবে।
৫) সকল সেমিস্টারে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার সুযোগ উন্মুক্ত করতে হবে এবং ইমপ্রুভমেন্ট ফি কমিয়ে রিটেক ফি’র সমান করতে হবে। এ ছাড়া কোনো শর্ত ছাড়াই এই দাবি চলতি সেমিস্টার থেকেই কার্যকর হবে—এই মর্মে লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে।
৬) গত ১০ই আগস্ট, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যক্রম সংস্কাররের প্রাথমিক প্রস্তাবনা’ বিষয়ে মাননীয় ভিসি স্যার বরাবর, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ইইই বিভাগের ছাত্র মিফতাহুল ফেরদৌস একটি আবেদন পত্র জমা দেয়, যার অনুলিপি রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার এবং প্রক্টর অফিসে জমা দেওয়া হয়। সেখানকার ৪টি দাবির প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে নতুন ২০ টি বাস সংযোজন’ এর ব্যাপারে কোনোরূপ অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এ ছাড়াও নিজস্ব বাসগুলোর মধ্যে লক্কর ঝক্কর ২০ বছরের পুরোনো এস আলম হতে ক্রয়ক্রিত বাস, যেগুলো সরকার কর্তৃক ফিটনেস রিনিউ করা হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো ডাম্পিং এর বদলে জোড়াতালি দিয়ে নতুন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বাস স্ট্যান্ডে শিক্ষার্থী এবং ফিল্ড সুপারভাইজরদের ভোগান্তি কমাতে প্রস্তাবিত ২টি আগমন-বহিরগমন এলইডি ডিস্প্লে এর ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এই দুটি ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট জবাব এবং ডেডলাইন প্রয়োজন।
৭) মেডিকেল সমস্যার সমাধানে ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে।
৮) জিমনেশিয়াম কত দিনের মধ্যে চালু করা সম্ভব তারিখ প্রকাশ করতে হবে এবং তা চালুর একটি নির্দিষ্ট ডেডলাইন ঘোষণা করতে হবে।
৯) স্পেশাল এক্সাম চালু করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে লিখিত অঙ্গীকার দিতে হবে। পাশাপাশি নীতিমালা প্রণয়নে কত দিন সময় লাগবে তাও লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
১০) মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এডজাংক্ট ফ্যাকাল্টি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ করা হবে—এই মর্মে অঙ্গীকার দিতে হবে।
১১) ক্যাফেটেরিয়া, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, স্টিশন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটসংলগ্ন খাবারের দোকানগুলোর খাবারের মান নিশ্চিত করতে হবে এবং মূল্য তদারকির দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। কতদিন পর পর এ তদারকি করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট নীতিমালা লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
১২) গেল বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের মধ্যে যারা বর্তমান শিক্ষার্থী, তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা জড়িত, তাদের সনদপত্র বাতিল করতে হবে। এবং অতীতে আমাদের ছাত্র ভাইদের যারা রক্তাক্ত করেছিল তাদের সনদপত্রও বাতিল করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দৃশ্যমান রাখতে হবে এবং কবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব তারিখ লিখিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
১৩) সেন্ট্রাল মসজিদ কবে নাগাদ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব তার নির্দিষ্ট তারিখ প্রকাশ করতে হবে।
১৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইফাই সিস্টেম আধুনিকায়ন করতে হবে এবং এটি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করা সম্ভব তার তারিখ প্রকাশ করতে হবে।
১৫) ACAD-এর সকল সেবা ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার অঙ্গীকার লিখিতভাবে দিতে হবে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ:
এই কমিটি আগামীকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ ও রোডম্যাপ প্রণয়ন করে ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে জমা দেবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আইআইইউসি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে। এতে ট্রেজারার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, সকল অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকরা অন্তর্ভুক্ত আছেন।