ঢাকা কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের সরকারি কলেজগুলোতে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা ও হামলার বিচার দাবিতে দেশের সব সরকারি কলেজে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকবে, এবং শিক্ষকরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে সংগঠনের সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ রানা খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর পরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। শিক্ষক সমাজের মর্যাদা রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ। এই ঘটনার বিচার না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সব সরকারি কলেজে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি শিক্ষকরা প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ থেকে বিরত থাকবেন।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, ‘আমরা ১৫ অক্টোবরের পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও আহ্বায়ক কমিটির যৌথ সভায় বসব। সেখানে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। যদি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আন্দোলন আরও কঠোর হতে পারে।’
ঢাকা কলেজে সংঘটিত এই ঘটনাকে ‘মব আক্রমণ’ আখ্যা দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেছেন, ‘আমরা শান্তিপ্রিয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের হামলা মেনে নিতে পারি না। যারা শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চায়, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ক্ষুণ্নের এমন ঘটনায় পুরো শিক্ষা পরিবার হতবাক।’
শিক্ষা ক্যাডারদের দাবি, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তৌহিদুর রহমান এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর বহিরাগতদের একটি সংগঠিত দল হামলা চালায়।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। শিক্ষা ভবনের দিকে যাওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী কলেজের উপাধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে হুমকি দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে এমন আশঙ্কায় কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ও কর্মচারীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয় এবং ভিজিলেন্স টিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলে।
এরপর ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তৌহিদুর রহমান ক্যাম্পাসে অবস্থানরত এবং শিক্ষা ভবনের দিকে লংমার্চে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলতে গেলে আকস্মিকভাবে কিছু ছাত্র তাঁর উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এতে উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে কিছু বহিরাগত ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে এবং উচ্চমাধ্যমিকের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। একপর্যায়ে শিক্ষকরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা প্রথমে পিছু হটে, কিন্তু পরে পুনরায় সংগঠিত হয়ে শিক্ষক লাউঞ্জে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
এ সময় শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অবরুদ্ধ শিক্ষকদের নিরাপদে উদ্ধার করে।
ঘটনার পর থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখো’ স্লোগান তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলছেন, এই হামলা কেবল একজন শিক্ষকের ওপর নয়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আঘাত।
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করবে। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, দেশের প্রতিটি সরকারি কলেজে মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি কার্যকর হবে, তবে শিক্ষকরা নিজেদের ক্যাম্পাসে অবস্থান করে প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে সহযোগিতা করবেন।
শিক্ষক সমাজের মতে, এই ঘটনার বিচার না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে, যা সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।