নন্দিত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা ও নির্মাণ করছেন তিনি। নব্বই দশক থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য রোকেয়া প্রাচী। সরকার দলীয় বিভিন্ন আন্দোলনে মাঠে থেকে ভূমিকা রাখছেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে বুধবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির সামনে অবস্থান এবং প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। তবে সেখানে তার ওপর হামলা হয়।
বিষয়টি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-কে নিশ্চিত করে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা হয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। হঠাৎ আমাদের ঘিরে ধরে বেধড়ক পেটানো হয়।’
তাকে টার্গেট করে পেটানো হয়েছে, এমন অভিযোগ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘যারা পিটিয়েছে তারা আমাকে টার্গেট করে এসেছে। প্রত্যেককে আমার শিক্ষিত মনে হয়েছে। তারা খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেছে। তাদের কথাবার্তা শুনেই বুঝেছি তারা দুষ্কৃতকারী নয়। আমার মাথায় আঘাত করতে চেয়েছিল কিন্তু হাত দিয়ে ফেরাতে গিয়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছি। তবে পিটে বেধড়ক পেটানো হয়। পুরো শরীরজুড়েই ব্যথা।’ তবে হামলাকারী কাউকে তিনি চিহ্নিত করতে পারেননি বলেও জানান। ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শোবিজ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

মোমবাতি প্রজ্বালনের সময় রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আমরা সবাই আজ এখানে একত্র হয়েছি, কারণ আমাদের বাংলাদেশ পুড়েছে। আমরা একত্র হয়েছি, কারণ আমাদের ১৯৭১ পুড়েছে। আমরা এখানে একত্র হয়েছি, কারণ আমাদের বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়েছে। ধানমন্ডির ৩২ পুড়েছে। আমরা এখানে একত্র হয়েছি বাংলাদেশ পুড়েছে বলে। আমরা এখানে কোনো রাজনীতির কথা বলতে আসিনি। বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা এখানে শোক প্রকাশ করতে এসেছি শান্তিপূর্ণভাবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি। তিনি আমাদের জন্য এই বাংলাদেশ দিয়েছেন, সংবিধান দিয়েছেন। এই ৩২ যখন পুড়েছে, তখন মনে হয়েছে আমরা পুড়েছি। আমরা এই ধানমন্ডি ৩২–এ দাঁড়িয়ে বিশ্বের এই মহানায়কের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমরা লজ্জিত। বাঙালি জাতি লজ্জিত আজকে।’
এর আগে বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আছি ধানমণ্ডি ৩২। হোক সকল হত্যার সকল নৈরাজ্যের বিচার। বিচার হোক বাঙালির ইতিহাস হত্যার। আছি। আমরাও বিচার চাই। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে স্মরণ করব স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস। আছি পুড়ে যাওয়া ৩২-এ। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।’ কোটা সংস্কারের জের ধরে বাড়িটি সরকার পতনের দিন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পোড়াবাড়ির একটা অংশে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারাও দেশ ছেড়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিভিন্ন সময়ে সুবিধা নেয়া শিল্পীরা মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন আত্মগোপনে। তবে ব্যতিক্রম দেখা যায় রোকেয়া প্রাচীকে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আপনি দেশ ছাড়লেন না কেনো? উত্তরে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি পালাব কেনো? আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। এটা অন্যায় কিছু নয়। আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। হামলার আশঙ্কায় হয়ত আমাদের অনেক নেতাকর্মী ভয়ে লুকিয়ে আছেন।’

অভিনয়ের চেয়ে বর্তমানে রাজনীতিতে বেশ সরব রোকেয়া প্রাচী। মাঝে মধ্যে পাওয়া যায় অভিনয় ও নির্মাণে। তার প্রযোজিত ও নির্মিতব্য মুক্তির অপেক্ষায় আছে চলচ্চিত্র ‘রেণুর মুক্তিযুদ্ধ’। বেগম ফজিতুলন্নেসা মুজিব এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সপরিবারের মুক্তিযুদ্ধের বন্দি সময়ের সত্য কাহিনি এ সিনেমায় ফুটে উঠবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সিনেমাটি সরকারি অনুদান পেয়েছে।
এ ছাড়া তার অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় আছে দেশ ভাগ ও ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। বর্তমানে তিনি টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :