শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০১:২৪ পিএম

আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে: ন্যান্সি

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০১:২৪ পিএম

আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে: ন্যান্সি

কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ার তার। এর মধ্যে ১০ বছর আওয়ামী লীগের নিপীড়নের শিকার বলে জানিয়েছেন তিনি। নানা কোণঠাসায় ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময় গান থেকে দূরে থাকতে হয় তাকে। প্রত্যাশিত কাজগুলো হয়ে যায় হাতছাড়া। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি করায় কালো তালিকায় থাকে তার নাম। এমনকি বাবার থেকে সন্তানের পরিচয় হারাতে হয়। দীর্ঘ সময়ের নিপীড়ন ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে কথা বলেছেন আনন্দ আড্ডার সঙ্গে।

গণঅভ্যুত্থানের বিজয়
একটা সময় ধরেই নিয়েছিলাম আমি হয়তো মরে যাব কিন্তু এই স্বৈরাচারের পতন দেখে যেতে পারব না। হতাশা কাকে বলে সেটা বোঝানো যাবে না। বেঁচে থাকতে সেটা দেখেছি এই যে আনন্দ, এই আনন্দে দুই দিন শুধু হেসেছি। বিগত ২০ বছরে যত কেঁদেছি তার বিপরীতে এত পরিমাণে আনন্দ হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা এখন স্বাধীন।

প্রথমবার আমেরিকা সফর
একের পর এক অত্যাচারের কারণে একটা সময় সিদ্ধান্ত নিই, এ দেশে আর থাকব না। কারণ, এই স্বৈরাচারের পতনও হবে না আর কোনো দিন এ দেশে কথাও বলতে পারব না। যদি নিশ্বাসটুকু কেড়ে নেওয়া যেত তাহলে স্বৈরাচারীরা কেড়ে নিত। তখন মনে হয়েছে চলে যাব। গত বছরের শেষদিকে দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবার আমেরিকা গিয়েছি। বিদেশে কখনো শো করতে দেওয়া হয়নি। বিদেশে স্থায়ী হওয়ার জন্য আবেদন করি। টাকা জমা দেই। কারণ, এ দেশে কিছু নিয়ে আলোচনা করা যেত না। কিছু বললেই স্বাধীনতাবিরোধী বলা হতো। এক দিন ভাবতে ছিলাম নিজ জন্মভূমি ছেড়ে যাব। এ কথা ভেবে অনেক কান্নাকাটি করি। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিই বাঁচি-মরি এখানেই থাকব। এর শেষ দেখে ছাড়ব। এটা কারও বাবার দেশ না, আমার দেশ। দলীয় ব্যাপারের কারণে স্টেজ শোতে বঞ্চিত ছিলাম। বিএনপির পদে না থাকলেও ওই মতাদর্শের কারণে কালো তালিকায় ছিলাম।

কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। ছবি: সংগৃহীত

বাড়ি ভাঙচুর
২০১৩ সালে একটা স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে এক দিন হঠাৎ করেই আমার নেত্রকোনার বাড়িতে এক গাড়ি পুলিশ যায়। বলা হয় এই বাড়িতে জামায়াত-শিবিরের গোপন মিটিং হয়। একেবারে ভিত্তিহীন একটি ট্যাগ দেওয়া হয়। আমার ছোট ভাইকে তুলে নিয়ে যাবে। ওর বয়স ১৫ বছর। ও কল করে জানালে তখন পুলিশের সঙ্গে কথা বলি। বুঝতে পারছিলাম তারা আমার ছোট ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে ফাঁসাবে। তখন তাদের সঙ্গে কথার একপর্যায়ে বলি আমার ভাইকে অন্যায়ভাবে নিয়ে গেলে আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করব। বাড়ির দরজা ভেঙে ভাইকে নিতে হবে। একটা সময় তারা চলে যায়। রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর প্রায় দিনই পুলিশ যেত বাড়ির সামনে। তখন সবকিছু ফেলে গ্রামে চলে যাই। প্রায় ১ মাস সেখানে ছিলাম। প্রতিদিন পুলিশ আসত। তখন খুবই বীভৎস সময় গেছে। একটা সময় আমার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাসা থেকে সবকিছু লুট করে নেয়। প্রতিবেশীরা সেসব দেখলেও ভয়ে বলতে পারিনি। এ দেশে অনেক আগেই লুটপাট শুরু হয়েছিল।

শো বাতিল
বিএনপির মতাদর্শের কারণে একের পর এক শো বাতিল হয়েছে। শোগুলো কনফার্ম সত্ত্বেও আমাকে বাদ দেওয়া হতো। অনেক সময় শো করতে রওনা দিয়ে মাঝ রাস্তা থেকে ফেরত আসতে হয়েছিল। সহকর্মীরাও অনেক সময় আমার সঙ্গে নোংরা রাজনীতি করেছে। আমাকে বাদ দেওয়াতে অন্যদের চাপ প্রয়োগ করত। চলচ্চিত্রের গানে সিন্ডিকেট আছে। সেখান থেকেও বাদ দেওয়া হয়। আমাকে দিয়ে গান করালে জাতীয় পুরস্কারে জমা দেওয়া যাবে না যার জন্য নেওয়া হতো না। আমার সঙ্গে অনেক অন্যায় হয়েছে। আমার ক্যারিয়ার একদম শেষ হয়ে গেছে।

ব্যক্তিজীবনে প্রভাব
এ সমস্যার প্রভাব আমার সংসার জীবনেও বাজেভাবে প্রভাব ফেলে। সব ধরনের বুলির শিকার হয়েছি। শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্য অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলাম। সে সময় ছড়িয়েছিল আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। আত্মহত্যা করার মতো দুর্বল মনের মানুষ আমি না। শুধু একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্য ওষুধ খেয়েছিলাম। আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চাউড় হয় ৬০টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। অথচ মাত্র সাতটি ওষুধ খেয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার হলেও গল্প তৈরি হয় সংসার জীবনে আমি নির্যাতনের শিকার। সে সময় অনেক রসালো গল্প তৈরি হয়। এসবের কারণে তখন মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল। যদিও আমি মানসিকভাবে স্ট্রং মনের মানুষ। কিন্তু ওই সময় প্রতিদিন মনে হতো এত অসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার মানে নেই। এমন কঠিন সময় পার করেছি।

মামলা
২০১৮ সালে আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার সাবেক স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ার কারণে আলাদা হয়ে যায়। যদিও চাপের মধ্যে বিয়েটা হয়েছিল। ওর স্ত্রী আমাদের কোণঠাসা করে রাখত। সারাক্ষণ আমরা নানাভাবে হুমকির মুখে থাকতাম। মেয়েটার দৌরাত্ম্যে ভাইয়ের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ করতে পারতাম না। আমাদের তিনজনের নামে নারী নির্যাতনের মামলা হয়। ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা মামলা করতে চাইলে নেওয়া হতো না। উল্টো আমার নামে আরেকটি মামলা হয়। জামিন নিয়ে নেত্রকোনা যাই। আমাকে আদালতে তোলা হলে রাষ্ট্রদোহী থেকে শুরু করে সব ধরনের ট্যাগ দেওয়া হয়। শুধু আমার ভাই বলেই দুই মাস জেল খাটতে হয়েছিল। খুবই ভয়ংকর সময় পার করেছি। আমাদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে। একটা সময় মামলা থেকে খারিজ পাই। তখন সবকিছু একেবারে শেষ হয়ে যায়।

কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। ছবি: সংগৃহীত

কেমন বাংলাদেশ চান?
এখন যেমন মন খুলে সবকিছু বলতে পারছি এমন বাংলাদেশই সব সময় চাই। বাক-স্বাধীনতা চাই। অন্যায়কে অন্যায় এবং ন্যায়কে ন্যায় বলতে হবে। কণ্ঠরোধ করা যাবে না। স্বৈরাচারী সরকার যদি কাউকে টার্গেট করত তার পুরো পরিবার ধ্বংস করে দিত। রেষারেষিমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ চাই। আমার জন্য বাবার পেনশন আটকে দেওয়া হয়েছিল। পেনশন তোলার জন্য বাবাকে আবেদন করে লিখতে হয়েছিল আমার শৈশব কেটেছে গোপালগঞ্জ। সে ওই চেতনার। আরও লিখতে হয়েছিল আমার কন্যার সঙ্গে কোনো ধরনের বাবার সম্পর্ক নেই। শেখ হাসিনা সরকারের অনুগত তিনি। শেষ সম্বলের জন্য এটা লিখতে বাধ্য হয়েছে। সন্তানের তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দিতে হয়। এটা কতটা যন্ত্রণার সেটা বাবা আর মেয়ে ছাড়া কেউ বুঝবে না। ২০২০ সালে আমাকে নানাভাবে পুনরায় কোণঠাসা করা হয়। বাড়ি ভাঙচুর ও লুট হয়েছে। মান সম্মানের ভয়ে নিরুপায় হয়ে আমার দুটি বাড়ি ছোট ভাইয়ের নামে রূপান্তর করি।

এখন রাজনীতিতে সরব হবেন?
রাজনীতিতে জড়াতে চাই না। গণতান্ত্রিক একটা নির্বাচন চাই। তবে তার জন্য তাড়াহুরো নয়। প্রত্যেকটা রন্ধে রন্ধে এখনো স্বৈরাচারের বিষ রয়েছে। এসব কিছু অপসারণ করে দেশটাকে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিতে হবে। দেশের ভান্ডারে কিছু নেই। ডাকাতের দল সবকিছু নিয়ে গেছে। ডাকাত এদের কাছে লজ্জা পাবে। ভান্ডার এখন খালি। এটাকে স্থিতিশীল জায়গায় আনতে যতটুকু সময় দরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেটা দিতে হবে। আমাদের সবার এমপি-মন্ত্রী হওয়ার খুব লালিত্য। আগের কিছু মানুষ এমন নিলর্জের মতো করে গেছে। তাদের এত এমপি-মন্ত্রী হওয়ার শখ কেন? এখানে কি আছে? তাদের সবাইকে ধরা উচিত। আমার এমন শখ নেই। আমি শিল্পী পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করি। আর একটা কথা বলতে চাই তারকা দেখলেই নমিনেশন দেবেন না। যাচাই-বাছাই করে নেবেন। যোগ্যতা অনুযায়ী যেন হয়। আগের ভয়ংকর বাংলাদেশ চাই না। সব জায়গায় বাক-স্বাধীনতা চাই।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!