ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫

কী আছে শেফালি জারিওয়ালার ব্যবহৃত ওষুধে

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৫, ১১:৫৭ পিএম
গ্লুটাথায়োন ইনজেকশন নিতেন অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা। ছবি - সংগৃহীত

৪২ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা। তার অকাল মৃত্যু ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। পুলিশ জানিয়েছে, শেফালি দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টি-এজিং ও ত্বক ফর্সাকারী ওষুধ সেবন করতেন। 

মৃত্যুর দিনও তিনি গ্লুটাথায়োন ইনজেকশন নিয়েছিলেন এবং উপবাসে ছিলেন, যা তার শরীরে গুরুতর প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশের ভাষ্য, শেফালি সেদিন দুপুরে নিয়মিত অ্যান্টি-এজিং ইনজেকশন নিয়েছিলেন এবং রাতে নিজস্ব কিছু ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। সেই দিন পূজার জন্য তিনি উপবাসেও ছিলেন। 

পরে রাতে তার রক্তচাপ কমে যায়, শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে অ্যালার্জিক শক হতে পারে, যা হার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করে।

পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে শেফালির ফ্ল্যাট থেকে অ্যান্টি-এজিং ওষুধ, ত্বক উজ্জ্বল করার ট্যাবলেট, গ্লুটাথায়োন ইনজেকশন, ভিটামিন ‘সি’ ইনজেকশন এবং মাল্টিভিটামিনসহ বেশ কিছু ওষুধ উদ্ধার করে। 

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এর মধ্যে কোনো খুন বা অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

শেফালির ঘনিষ্ঠদের ভাষ্যমতে, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে তিনি নিয়মিত গ্লুটাথায়োন ও ভিটামিন ‘সি’ ইনজেকশন নিচ্ছিলেন। যদিও শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শে এই চিকিৎসা শুরু করেছিলেন, তবে শেষের দিকে তিনি নিজেই ওষুধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

বিশ্বজুড়ে সৌন্দর্য সচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসার চাহিদা বেড়েছে। গ্লুটাথায়োন ইনজেকশনের মতো চিকিৎসা এখন গুরগাঁও, দিল্লি ও মুম্বাইয়ের ক্লিনিকগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

প্রতিটি সেশনের খরচ ৪,০০০ থেকে ১২,০০০ রুপি। দিল্লিতে পাঁচ সেশনের প্যাকেজ ৩৫,০০০ রুপি এবং দশ সেশনের প্যাকেজ ৬০,০০০ রুপি। মুম্বাইয়ে ঘরে বসেই ইনজেকশন নেয়ার সুবিধা রয়েছে, সেখানে ছয় সেশনের প্যাকেজ ৩৮,৪০০ রুপি এবং ১৮ সেশনের প্যাকেজ ১,০৮,০০০ রুপি।

চিকিৎসকদের মতে, গ্লুটাথায়োন শরীর থেকে টক্সিন দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি একটি কসমেটিক ওষুধ, যার হার্টের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। 

তবুও দীর্ঘদিন অব্যাহত সেবনে কিডনি, লিভার এবং শরীরের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ইনজেকশন যদি অপরিষ্কার পরিবেশে বা ভুল মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, তবে তৎক্ষণাৎ অ্যালার্জি, রক্তচাপ কমে যাওয়া, সংক্রমণসহ প্রাণঘাতী প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।

গ্লুটাথায়োন ইনজেকশন। ছবি - সংগৃহীত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ করে উপবাসের সময় এই ধরনের ইনজেকশন বা ওষুধ গ্রহণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ উপবাসের সময় শরীর দুর্বল থাকে, রক্তচাপ কমে যায় এবং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। তখন অ্যান্টি-এজিং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়।

অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসা নিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন। অনেক সময় অনলাইনে বিক্রি হওয়া সৌন্দর্য পণ্য বা হারবাল ট্যাবলেটের মান যাচাই করা হয় না। সেগুলোর গায়ে যা লেখা থাকে, তা অনেক সময় বিভ্রান্তিকর। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখে এসব পণ্য কিনে ব্যবহার করেন, যা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বয়স ধরে রাখার বা কমানোর কোনও নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায় নেই। অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসার বেশিরভাগ গবেষণাই এখনো প্রাণীর ওপর সীমাবদ্ধ। কিছু চিকিৎসা যেমন হরমোন থেরাপি, বোটক্স বা কসমেটিক সার্জারিতে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

বোটক্সের ভুল প্রয়োগ বা নকল পণ্য ব্যবহারে অ্যালার্জি, পক্ষাঘাত এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বোটক্স ব্যবহার করে ২২ জন নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, কয়েকজনের দেহে বটুলিজমের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

চিকিৎসকরা আরও বলেন, যারা হৃদরোগ, কিডনি বা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, যারা গর্ভবতী বা স্তন্যদানরত, বা যারা অন্য কোনো ওষুধ নিয়মিত সেবন করছেন, তাদের অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসা নেয়া উচিত নয়।

শেফালির হঠাৎ মৃত্যু যেন অ্যান্টি-এজিং ও ত্বক ফর্সাকারী চিকিৎসার অন্ধ অনুসরণের প্রতি এক জোরালো সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে। সৌন্দর্য আর বয়স ধরে রাখার দৌড়ে অজান্তেই জীবন কতটা ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে-শেফালির মৃত্যু সেই প্রশ্নই যেন সামনে নিয়ে আসছে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, পুলিশ রিপোর্ট, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি।