নাটোরের এক বৃদ্ধ গরু ব্যবসায়ীর অশ্রুসজল মুহূর্ত এক সময় নাড়া দিয়েছিল পুরো দেশকে। কোরবানির ঈদে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে নিজের গরু বিক্রি করতে গিয়ে জাল নোটের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ১ লাখ ২৩ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ২১ হাজার টাকা বেরিয়েছিল নকল। সেই শোচনীয় প্রতারণায় ভেঙে পড়া রইস উদ্দিনের কান্না পৌঁছেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিটি কোণে। তখনই তার পাশে দাঁড়ান চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। শুধু সমবেদনা নয়, প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি-এই মানুষটিকে ওমরাহ পালন করাবেন নিজ খরচে।
শেষ পর্যন্ত কথা রাখলেন অপু। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রইস উদ্দিন ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান সৌদি আরব। সেখান থেকে ফিরে তিনি যেন নতুন আলোয় ভরিয়ে দিলেন অপুর হৃদয়ও। গত মঙ্গলবার নাটোরের সিংড়া উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের বাড়িতে নায়িকাকে নিমন্ত্রণ জানালেন তিনি। অপুও সেই আমন্ত্রণ রাখতে গিয়ে হাজির হলেন ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করা সেই বৃদ্ধের দাওয়াতে।
রইস উদ্দিন সেদিন মেয়ের মতো করে বরণ করলেন অপুকে। ঘরোয়া আড্ডায় কাটল দীর্ঘ সময়। এরপর হাত বাড়িয়ে দিলেন সৌদি আরব থেকে আনা উপহারের প্যাকেট। এর মধ্যে ছিল খেজুর, পবিত্র জমজমের পানি, জায়নামাজ ও তজবি। উপহার দিতে গিয়ে আবেগে ভেসে তিনি বললেন, ‘আমি আমার মেয়ের জন্য উপহার এনেছি।’
উপহার পেয়ে অপু বিশ্বাস হাসিমুখে বললেন, ‘এই জন্য আলাদা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো না। আমি যাকে বাবা বলেছি, তার কাছ থেকে এটা আমার জন্য দোয়ার সমান। উনি আমার আর আমার সন্তানের জন্য দোয়া করেছেন-এর চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।’
রইস উদ্দিনের পাশে দাঁড়ানোয় অপুর এই মানবিক ভূমিকা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে বিনোদন অঙ্গনের অন্দরমহলেও। শাকিব-বুবলী প্রসঙ্গ বা ব্যক্তিগত জীবনের নানা আলোচনার মাঝেও এই উদ্যোগ যেন এক টুকরো আলাদা গল্প। প্রথমে আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন তার তাৎক্ষণিক সহায়তায় ৫০ হাজার টাকা দেয়। পরে আরও সহায়তা আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। কিন্তু ওমরাহ যাত্রার মূল ব্যয় বহন করেন অপু।
এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়, গ্ল্যামারের বাইরেও এই নায়িকার আছে এক মানবিক হৃদয়। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, ‘শাকিব খানের প্রসঙ্গ নিয়ে হাসাহাসি হলেও, অপুর এই উদ্যোগে মায়ের মমতা খুঁজে পাওয়া যায়।’
তবে এই উপহারের পেছনের গল্প শুধু জমজমের পানি আর তজবিতে থেমে নেই, এর সঙ্গে মিশে আছে আস্থা, দয়ার আবেশ আর একটি অশ্রুভেজা ঘটনার পূর্ণতা।