ঢাকা শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫

আট বছর পর একসঙ্গে গাইলেন তাসরিফ-শুভ 

আরফান হোসাইন রাফি
প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৫, ০৬:১০ পিএম
জনপ্রিয় ব্যান্ড কুঁড়েঘর। ছবি - সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শ্রোতাদের জন্য বড় আয়োজনে নতুন গান নিয়ে এসেছে জনপ্রিয় ব্যান্ড কুঁড়েঘর। ব্যান্ডটির নতুন গান ‘পাহাড় যাব’, যার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে বহুপ্রতীক্ষিত তাসরিফ খান ও জিসান খান শুভর যুগল কণ্ঠ। প্রায় আট বছর আগে এই দুই শিল্পীর কণ্ঠে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি গান আজও শ্রোতাদের হৃদয়ে দাগ কেটে আছে।

নতুন এই গানে পাহাড়ি সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে তুলে ধরা হয়েছে। যা গানটির প্রতি দর্শক-শ্রোতাদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। গানটির কথা ও সুর করেছেন তাসরিফ ও জিসান খান শুভ। সংগীতায়োজন করেছেন আমজাদ হোসেন এবং ভিডিওটি নির্মাণ করেছেন ফারহান আহমেদ রাফাত।

গান এবং জিসান খান শুভর পুনর্মিলন নিয়ে তাসরিফ খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি আর শুভ দুজনেই নেত্রকোনার মানুষ। শুভ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ২০১৬ সালের দিকে আমরা একসঙ্গে ছাদে বসে গান করতাম। ‘কার পোশা পাখি’, ‘ব্যাচেলর’, ‘আমার কাছে তুমি মানে’-এ রকম আরও অনেক গান। তখন মানুষ আমাদের যেভাবে ভালোবেসেছে, দেশের নানা প্রান্তে, মানুষের মোবাইলে আমাদের গান যেভাবে বাজত, সত্যি অবাক লাগত। তারপর প্রায় আট বছর পর আবার শুভ আর আমি একসঙ্গে গানে ফিরেছি। গানটি নিয়ে আমি ভীষণ এক্সাইটেড। ভালো লাগার বিষয় হলো, শুভ আর আমার গানের ভাবনা মিলে যায়। লোকে বলে, আমাদের কণ্ঠ একসঙ্গে হলে এক ধরনের ম্যাজিক তৈরি হয়! এই ম্যাজিকটাই ‘পাহাড় যাবো’ গানে পাওয়া যাবে।’ 

গানের সৃষ্টির কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই গানটি তৈরি হয়েছিল কক্সবাজারে এক গ্রুপ ট্যুরে। সেখানে শুভ, আমি এবং কুঁড়েঘরের অন্য সদস্যরাও ছিলাম। এক সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর সাম্পান বিচের নিবিড় পরিবেশে চায়ের দোকানে আড্ডা চলছিল। হঠাৎ শুভ গুনগুন করে উঠল ‘চল পাহাড় যাব, পাহাড় যাব’। লাইনটা শুনেই বললাম, ‘এটা দিয়ে তো একটা গানই করা যায়!’ সেই হাসি-আনন্দের মধ্যেই প্রথমে চার লাইন, তারপর ছয় লাইন, আর শেষে সাগরপারে বসেই তৈরি হলো পুরো গানটি। এ ছাড়াও গানের ভিডিও তৈরি হয়েছে খুব যত্নসহকারে। আমরা বান্দরবানের গহীনে তিন দিন ধরে বিশাল ইউনিট নিয়ে শুট করেছি, যেখানে পাহাড়ি মানুষের বাস্তবজীবন ও সংস্কৃতি উঠে এসেছে। শুটিং করতে গিয়ে প্রচুর হাঁটতে হয়েছে। এমনকি এক সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় তাকে চিঠি লিখেও বার্তা পাঠানোর মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে। এইটুকু বলতে পারি, অনেকেই এই ভিডিও দেখে পাহাড়ে যাওয়ার আগ্রহ অনুভব করবেন এবং প্রকৃতির টানে পাহাড়ের দিকে ধাবিত হবেন। তাই এই গান নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। আমি বিশ্বাস করি, যারা পাহাড়ে যাবে, একবার হলেও গানটি গাইবে এবং শুধু পাহাড়প্রেমী নয়, প্রত্যেক প্রকৃতিপ্রেমীর মনেই গানটি জায়গা করে নেবে।’

এ বিষয়ে জিসান খান শুভ বলেন, ‘এই গান নিয়ে আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি ভীষণ আনন্দিত। কারণ, আমি একজন গানের মানুষ। আর কুঁড়েঘর আমার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে পথচলার প্রথম প্রেরণা এবং আমার আবেগের একটা জায়গা। নিজের ব্যান্ড এবং সলো ক্যারিয়ারের জন্য প্রায় দশ বছর তাসরিফ ভাইয়ের সঙ্গে গান করা হয়নি। অনেকগুলো বছর পর আবার কুঁড়েঘরের সঙ্গে কাজ করছি, এটা নিয়ে আমি ভীষণ এক্সাইটেড। এটা অবশ্যই নতুন কিছু একটা ঘটাবে।’

গানের ভিডিও নিয়ে নির্মাতা ফারহান আহমেদ রাফাত বলেন, ‘এই গানের ভিডিওতে আধুনিকতার বাইরে পাহাড়ের গল্প বলতে চেয়েছি। বান্দরবানের আলীকদমের গহীনে শুটিংয়ের সময় আমরা ছিলাম পুরোপুরি নেটওয়ার্কের বাইরে। একদিন রাতে গানটি রেকর্ড হওয়ার পর তাসরিফ ভাই বললেন, ভোরেই পাহাড়ে লোকেশন দেখতে যাব। পরদিন আমরা টোয়াইন খাল ধরে চলে যাই গহীনে। সব দেখে ফিরে সিদ্ধান্ত নিই, শুটিংয়ের প্রথম দিন হবে শহর-সংলগ্ন এলাকায়। কিন্তু যাদের বলেছিলাম পরদিন শুটিং হবে, তাদের জানাবো কীভাবে? ওখানে তো নেটওয়ার্কই নেই! শেষে চিঠি পাঠিয়ে জানাতে হয়। এই ডিজিটাল যুগেও চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা দারুণ লেগেছে।’

যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘তাসরিফ ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রায় দশ বছরের সম্পর্ক। এই মানুষটাকে ভালো লাগা থেকেই কুঁড়েঘরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এরই মধ্যে কুঁড়েঘরের বেশ কিছু ভিডিও আমি বানিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় ‘পাহাড় যাব’ গানটির ভিডিও তৈরি করেছি। ভিডিওতে পাহাড়ি সৌন্দর্য, ঝিরি, খাল, ঝরনা, জুম ঘর আর পাহাড়ের বিশালতা তুলে ধরতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এই গানচিত্রটি পাওয়া যাচ্ছে ‘কুঁড়েঘর’-এর ইউটিউব চ্যানেলে। দর্শক নিশ্চয়ই গানটিকে ভালোভাবেই গ্রহণ করবেন, সেই আশাই করি।’